পণ চেয়ে অত্যাচার, পুড়ে মরে শাহনারা হয়ে উঠল 'কবিগুরুর নিরুপমা'
কলকাতা, ২৫ সেপ্টেম্বর : সাত ভাইবোনের সংসারে অনটনকে সঙ্গী করেই বড় হয়ে উঠেছিল শাহনারা (১৮)। বাবা সামান্য মৎস্যজীবী। নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসারে রোজনামচা চালানোর রসদটুকু জোটানোই দায় হয়ে পড়েছিল। আর সেজন্যই নাবালিকা থাকতে থাকতেই বিয়ে হয়ে যায় উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের শাহনারার।
ইঁটভাটায় কর্মরত শ্রমিক বাপ্পা গাজির সঙ্গেই শেষপর্যন্ত বিয়ে ঠিক হয় শাহনারার। তবে সেটাই যে তার জীবনে শেষ পরিণতি নিয়ে আসবে তা বোধহয় জানা ছিল না তাঁর। শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে শেষ পর্যন্ত খুন হতে হল তাঁকে। তবুও কোথাও গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিরুপমার সঙ্গে মিলেমিশে এক হয়ে গেল শাহনারা।
ঘটনা হল, বিয়ের পর থেকেই শ্যামলা বর্ণের মাসুল হিসাবে ও পণের টাকা না পাওয়ায় নিত্য কটূ কথা ও অত্যাচার বরাদ্দ ছিল শাহনারার। এসবের মধ্যেই কয়েকমাস আগে কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় সে।
কষ্ট, অত্যাচার আর সন্তানকে বুকে আগলে ধরেই স্বামী ও শাশুড়ির তীব্র গঞ্জনার মধ্যে দিন কাটছিল শাহনারা বিবির। তবে এসবের মধ্যেই ঘটল বিপত্তি। স্বামী বাপ্পা গাজি ও শ্বাশুড়ি খাদিজা বিবি বাড়ি তৈরির জন্য পাঁচ হাজার ইঁটের নয়া আবদার করে বসলেন। বাবার থেকে যে করে হোক ইঁটের টাকা আনতে হবে, এটাই ছিল নির্দেশ।
শাহনারা জানত বাবার পক্ষ্যে ইঁটের টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। আর তাই শত অত্যাচার সত্ত্বেও মুখ বুজে ছিল সে। যদিও তা করে শেষরক্ষা হল না। অভিযোগ, রাগের বশে শাহনারার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিয়ে তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে। অভিযোগের তির শাশুড়ি ও স্বামীর দিকেই।
বৃহস্পতিবারই বসিরহাটের হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শাহনারাকে। অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে দেখে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে। সেখানেই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হেরে গিয়েছে শাহনারা। ঘটনার পর থেকে স্বামী বাপ্পা গাজি পলাতক। শ্বাশুড়ি খাদিজা বিবিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নিজের বাবাকে শ্বশুরবাড়ির পণের টাকার হাত থেকে বাঁচিয়ে দুনিয়া ছেড়েছে শাহনারা। কোথাও গিয়ে শাহনারাই হয়ে উঠেছে আজকের নিরুপমা।