ভুয়ো পরিচয়ে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপনই নেশা, তাতেই দিবাকরকে খোয়াতে হয় সেনার চাকরি
একাধিক নারীসঙ্গেই সেনার চাকরি থেকে বরখাস্ত হতে হয় বেলেঘাটা গুলিকাণ্ডে ধৃত দিবাকর দে-কে। নিজে বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও একাধিক মহিলার সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল দিবাকর।
কলকাতা, ২৬ অক্টোবর : একাধিক নারীসঙ্গেই সেনার চাকরি থেকে বরখাস্ত হতে হয় বেলেঘাটা গুলিকাণ্ডে ধৃত দিবাকর দে-কে। নিজে বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও একাধিক মহিলার সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল দিবাকর। ভুয়ো পরিচয় দিয়েই মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করত সে। তারপর যৌন নিপীড়ন চালাত। বাধা দিলে হিংস্র হতেও পিছপা হত না দিবাকর। একাধিক ঘটনায় ছুরি বা গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বাড়িতে সর্বদাই তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র মজুত থাকত বলেও অভিযোগ।
শুধু মহিলাদের প্রতারিত করাই নয়, পুলিশের একাংশের সঙ্গে মদতে সে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল, সেই তথ্য প্রমাণও উঠে এসেছে পুলিশি তদন্ত। এমনকী প্রেমিকা ঝুমকির নামে ফেক প্রোফাইল তৈরি করে বেলেঘাটা থানার ওসি-র নামে এই দিবাকরই যে কুরুচিকর মন্তব্য করেছিল, তাও জানতে পেরেছে পুলিশ। সাইবার ক্রাইম থানায় এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ এই ঘটনাটিতে আলাদা করে তদন্ত শুরু করেছে।
তদন্ত নেমে কীর্তিমান দিবাকরের নানা অপকীর্তির কথা জানতে পেরেছে পুলিশ। এই প্রেক্ষিতে দিবাকরের স্ত্রী চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনে। দিবাকরের স্ত্রীর অভিযোগ, ২০০৯ সালে তাদের বিয়ে হয়। তাদের ছ'বছরের একটি সন্তানও রয়েছে। দিনের পর দিন তাঁর উপর অকথ্য অত্যাচার চালান দিবাকর। বাধ্য হয়েই দিবাকরের বাড়ি ছেড়ে ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি মালদহে চলে আসেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, স্বামীর একাধিক নারীসঙ্গ ছিল। তা নিয়েই তাঁদের অশান্তির সূ্ত্রপাত।
বিয়ের আগেও যেমন একাধিক মেয়ের সঙ্গে তাঁর স্বামীর সম্পর্ক ছিল, পরেও একাধিক সম্পর্ক তৈরি হয়। বিয়ের এক বছরের মধ্যে সে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে বলে অভিযোগ দিবাকরের প্রথম স্ত্রীর। বিবাহিত এক মহিলার সঙ্গেও স্বামীর সম্পর্কের কথা জানতে পারেন স্ত্রী। সেই মহিলার স্বামীকে ছুরি মারার অভিযোগও ছিল দিবাকরের বিরুদ্ধে।
এরই মধ্য বেলেঘাটার ঝুমকির সঙ্গে তার পরিচয় হয় ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটে। তারপর ফেসবুকে যোগাযোগের মাধ্যমেই ঘনিষ্ঠতার শুরু। সেই ঘনিষ্ঠতা এমন পর্যায়ে যায় যে, ঝুমকি ছুটে যায় দিবাকরের রায়গঞ্জের বাড়িতে। সেখানেই দু'মাস আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। কোনওরকমে দিবাকরের হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করে কলকাতায় পালিয়ে আসে ঝুমকি। তারপরই মঙ্গলবার রাতে ঘটে যায় গুলিকাণ্ড।
এদিকে তদন্ত নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে দিবাকরের সঙ্গে যোগ ছিল বেলেঘাটা-সহ কলকাতার বহু থানার পুলিশকর্মীদের। সেই সূত্রেই পুলিশের গতিবিধি জানতে পেরে যেত সে। ফলে একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত দিবাকরকে পুলিশ ধরতে চেষ্টা করলেও পেরে ওঠেনি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিচয়ে সে থাকত। এখন চিকিৎসক পরিচয় দিয়েই সে চলত। ঝুমকির মোবাইলের কললিস্ট পুলিশের তরফ থেকেই পেয়েছিল সে। তারপরই তাকে খুনের পরিকল্পনা করে। সৌভাগ্যবশত গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে মাথার পাশ লাগে। প্রাণে বেঁচে যায় ঝুমকি।