মানুষ কি প্লাস্টিক মানি খাবে? ফের মোদিকে তোপ মমতার
নোট ইস্যুতে মোদি সরকারকে ফের হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদি সরকারকে জনস্বার্থবিরোধী বলে ব্যাখ্যা করে মমতা বললেন, 'মানুষের হাতে টাকা নেই, মানুষ কি প্লাস্টিক মানি খাবে? চলবে না'
কলকাতা, ১৯ নভেম্বর : নোট ইস্যুতে মোদি সরকারকে ফের হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদি সরকারকে জনস্বার্থবিরোধী বলে ব্যাখ্যা করে মমতা বললেন, 'মানুষের হাতে টাকা নেই, মানুষ কি প্লাস্টিক মানি খাবে? এসব চলবে না। কেন্দ্রের তুঘলকি শাসন মানব না।'
নোট-কাণ্ডে দিল্লিতে দরবারের পর কলকাতায় ফিরেই শনিবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কলকাতা শাখায় গিয়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্মী-আধকারিকদের কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, চাহিদামতো টাকার জোগান রয়েছে কি না। কেন এখনও একটাও ৫০০ টাকার নোট দেওয়া হয়নি? জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ গ্রাহকরা। এক বৃদ্ধ এগিয়ে এসে বলেন, আমার হাতে কালি লাগানো হয়েছে, তবু টাকা দেওয়া হয়নি।
৫০০ টাকা নিয়ে কেন্দ্র বৈষম্য করছে। এ রাজ্যে এখনও ৫০০ টাকার নোট প্রদান শুরু হয়নি। ১০০ টাকার নোট নেই, ৫০, ২০, ১০ টাকার নোটও অপ্রতুল। মানুষের হাতে টাকা নেই। তিনি প্রশ্ন তোলেন, দেশের কতজন মানুষ প্লাস্টিক অর্থনীতির আওতায় পড়েন? মাত্র ৪.৪ শতাংশ মানুষের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। বাকি মানুষগুলো খাবে কী? দেশের ৯৬ শতাংশ মানুষ কি ভুখা পেটে থাকবে? এভাবে দেশ চলতে পারে না। চাটুকারিতা করে কখনও মহৎ কাজ হয় না।
কেন্দ্রের এই সরকার কৃষিবিরোধী, শিল্প বিরোধী। এককথায় জনস্বার্থবিরোধী এই সরকার। প্রধানমন্ত্রী যদি মানুষের স্বার্থের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত বদল না করেন, তবে তিনি বৃহত্তর আন্দোলনের রাস্তায় হাঁটবেন। মমতা বলেন, 'এ জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়েছি। তারপরই বুঝতে পারবেন তৃণমূল কী করতে পারে!'
দেশের সরকারকে সব থেকে আগে বুঝতে হয় মানুষের সমস্যার কথা। কিন্তু এই সরকার সেইসব জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির দিকেই মনোনিবেশ করেছে। মোদিজি তো বলেছিলেন প্রত্যেকর অ্যাকাউন্টে ১৫ হাজার টাকা করে দেবেন। কোথায় গেল সেই টাকা? এখন মানুষের অ্যাকাউন্টের টাকাও কেড়ে নিচ্ছে সরকার। অ্যাকাউন্টে টাকা আছে, অথচ মানুষ খেতে পাচ্ছেন না। ঘরে খাবার নেই, শিশুর মুখে তুলে দেওয়ার জন্য বেবিফুড নেই, বাজারে সবজি নেই। বাজার থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে টাকা। সাধারণ মানুষ কোনও নোটই পাচ্ছেন না। ব্যাঙ্ক, এটিএম, পেট্রোল পাম্প- সর্বত্রই একই চিত্র।
এই সরকার এমনই এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে এরই মধ্যে ১২ বার সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়ছে। কোনও মতির স্থির নেই। আজকে একটা সিদ্ধান্ত, তো কাল একটা সিদ্ধান্ত, মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই যে ৫০০-হাজার টাকার নোট বাতিল করে দেওয়া হল, তার জন্য কোনও প্ল্যানিং করেনি সরকার। কোনও হোমওয়ার্ক ছিল না। হঠাৎ করে মনে হল নোট বাতিল করতে হবে, নোট বাতিল করে দাও। সেটা যে জনমানসে সাঙ্ঘাতিক রূপ নেবে, মানুষের মুখের অন্ন কেড়ে নেবে সেদিকে একবার ভেবে দেখেননি মোদি।
এদিন
রিজার্ভ
ব্যাঙ্ক-ভিজিটে
যাওয়ার
পর
মুখ্যমন্ত্রীকে
আশ্বাস
দেন
আধিকারিকরা।
খুব
শীঘ্রই
সমস্যার
সমাধান
হয়ে
যাবে,
নোটের
জোগানও
বাড়বে
বলে
তাঁদের
আশ্বাস।
কিন্তু
এই
আশ্বাসকে
ভেক
বলে
দাবি
করেন
মুখ্যমন্ত্রী।
এরপর
মোদিকে
আক্রমণ
করে
তাঁর
ক্ষোভ,
প্রথম
থেকে
কেন্দ্রের
এই
বিজেপি
সরকার
রাজ্যকে
বঞ্চনা
করে
চলেছে।
চা
শিল্প
থেকে
শুরু
করে
চটশিল্প
সর্বত্রই
হাহাকার
চলছে।
এখন
আমকাই
নোট
বাতিল
করে
এ
রাজ্যে
৫০০
টাকার
নতুন
নোট
পাঠানোর
ক্ষেত্রেও
বঞ্চনা
চলছে।
১১
দিন
হয়ে
গেলেও
মানুষের
দুর্ভোগ
এতটুকু
কমেনি।
এই
রবিচাষের
মরশুমে
কৃষকরা
ভোগান্তির
শিকার
হচ্ছেন।
ব্যহত
হচ্ছে
রবিশস্যের
উৎপাদন।
দেশে
কৃষিকাজ
ব্যাহত
হচ্ছে।
এরপর
শস্যের
আকাল
তৈরি
হবে
দেশে।
মূল্যবৃদ্ধি
হবে।
দেশটাকে
শেষ
করে
দেওয়ার
খেলায়
মেতেছেন
প্রধানমন্ত্রী।
এই ১১দিনে অনেক টাকা ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, মোদি সরকারের এই জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তের জন্য দৈনিক ২৫ হাজার কোটি টাকা জিডিপি নষ্ট হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে কত মানুষ মারা গিয়েছেন। কত মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তাই এই পরিস্থিতিতে দেশকে বাঁচানোর জন্য অবিলম্বে ৫০০ ও হাজার টাকার নোট পুনরায় চালুর কথা বলেন। পুরনো নোটও চলুক, নতুন নোটও আসুক। ৩০ ডিসেম্বরের পর বাতিল হবে পুরনো টাকা।
এরপর তিনি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে নবান্ন না গিয়ে সোজা চলে যান বড়বাজার। সেখানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের সমস্যার কথা শোনেন। পাশে থাকার আশ্বাস দেন। বলেন, দেশ দুর্ভিক্ষের দিকে এগোচ্ছে। এই অবস্থায় দেশকে বাঁচাতে হবে কেন্দ্রের জনবিরোধী সরকারেক উৎখাত করে।