পরিবর্তনের বাংলায় সন্ত্রাস মডিউলেও এসেছে পরিবর্তন !
বনধের বদলে বোমা, পরিবর্তন তো এসেছেই
২০১০ সালে অনুর্বর ৪টি মডিউল এবং ২০ সদস্য ছিল হয়তো জেএমবির। যেই জেএমবিকে মেরে ধরে প্রায় ধ্বংসের পথে নিয়ে এসেছিল বাংলাদেশ সরকার, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদাসীন ও নিষ্প্রভ মনোভাবের জন্য আবার নতুন অক্সিজেন পেয়েছে জামাত জঙ্গী সংগঠন। সিবিআই-এর আধিকারিকদেক কথায় গত ৪ বছরে ১৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে জেএমবি সংগঠন।
গত চার বছরে যে হারে সন্ত্রাস বেড়েছে তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইকে চলে গিয়েছে। বাংলাদেশ বারবার এই বিষয়ে রিপোর্ট চেয়েছে। আর সেই কারণেই বর্ধমান বিস্ফোরণে কেন্দ্র তাদের শীর্ষ নিরাপত্তা সংস্থা এনআইএ-ঘটনার মূল্যায়ণের জন্য পাঠানো হয়। এনআইএ ডিরেক্টর শরদ কুমার এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এলাকার পরিদর্শন করেন।
নিকট যোগ
জেএমবি-র মূল যুদ্ধটা আসলে বাংলাদেশ প্রশাসনের সঙ্গে। আর সেই যুদ্ধে আক্ষরিক অর্থে দেশ থেকে জেএমবি-কে উৎখাত করেছিল বাংলাদেশ প্রশাসন। যদিও আওয়ামী লিগকে গদিচ্যুত করার একই লক্ষ্যে জামাত-এ-ইসলামির সমর্থন পায় জেএমবি। আওয়ামী লিগকে ক্ষমতা থেকে ছুঁড়ে ফেলার পরিকল্পনার প্রারম্ভ হয় যখন ২০০৯ সালে জামাত জেএমবি-কে অর্থ ও পরিকাঠামো দিয়ে সমর্থন দিয়ে মাঠে নামে। জামাতের সঙ্গে সিমির যোগ ছিল এবং ভারতীয় কিছু জঙ্গী শাখাও সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। ২০১০ সালে ১০ সদস্য নিয়ে বাংলায় মডিউল গঠন করে তারা।
রাজনীতির খেলা
পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ ব্যবহার করেছিল জামাত-এ-ইসলামি। আইবি এবং এনআইএ -র অনুমান প্রশাসন তাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিল। সঙ্কেত ছিল কিছু শীর্ষ নেতা স্থানীয় নেতাদের জেএমবি-র 'অপারেশন'-এ মদত দেওয়ার জন্য উপদেশ দিয়েছিল। দর কষাকষির পর রাজ্য বেআইনি মাদ্রাসা গঠনের জন্য জমি প্রদান করেছিল। এমনকী দলছুট গোষ্ঠী আনিরুসুল স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। সন্দেহ এড়াতে নেতাদের বাড়ি ভাড়া নিয়েই গা ঢাকা দিয়েছিল।
এনআইএ অফিসারদের কথায়, তদন্তের সময়, দেখা গিয়েছে, অর্থের জন্য জামাতের কাছ থেকে সাহায্য পেত জেএমবি। জামাতের ভারতীয় শাখা ছিল যারা স্থানীয় যোগাযোগ বৃদ্ধির চেষ্টায় জুটেছিল। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে তাদের মধ্যে একটা ঐক্যবদ্ধ আগ্রাসন পরিলক্ষিত হয়েছিল। এই আগ্রাসণ ছিল ঘটনাটাকে চাপা দেওয়ার জন্য। তদন্তকারী অফিসাররা অন্তত এমনটাই মনে করেন।
তহবিলের উৎস
তদন্ত চলাকালীন এনআইএ এও জানতে পেরেছে, তহবিল বৃদ্ধির জন্য একাধিক পন্থা ব্যবহার করা হত। বাংলা অর্থের প্রবাহ ছিল অবাধ, কখনওই তা নিয়ন্ত্কিত ছিল না। সবচেয়ে বড় অর্থ প্রবাহ ২০১২ ও ২০১৩ সালে হয়েছিল এবং এই অর্থ প্রবাহ ছিল অবারিত। সৌদি আরব থেকে হুন্ডি সংগ্রহ, , বাংলাদেশে শস্য কর থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হত। এর কিছু অংশ দুর্নীতিতে আরোপিত করা হত। এই টাকা বাংলাদেশের ব্যাঙ্কে জড়ো করা হত বলে অনুমান তদন্তকারী আধিকারিকদের।
জেএমবি-র পুনরুত্থানে মহিলা কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। তারা এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল যে সমস্ত মডিউল পরিবারের মধ্যে দিয়ে যোগাযোগ স্থাপন করবে। জেএমবির এই পরিকল্পনার পিছনে একটিই পরিকল্পনা ছিল যে কাজের পদ্ধতি যাতে ঐক্যবদ্ধ হয়। পরে অবশ্য জেএমবি সদস্যদের অন্য সমাজের মহিলাদের সঙ্গে বিয়ে করতে পরামর্শ দেওয়া হয় যাতে পরিবার বৃদ্ধি পাশাপাশি জেএমবির সদস্য সংখ্যাও বৃ্দ্ধি পায়।
বাংলাদেশ দলিল
এনআইএ বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তে দলিল তৈরি করেছে তা অনুযায়ী, জামাত সদস্যরা পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় নেতাদের কয়েকজনের সঙ্গে গত চার বছর ধরে যোগাযোগ রেখে চলেছে। এমনকী নেতাদের সঙ্গে জেএমবির সদস্যদের বৈঠকও হয়েছিল।