বাংলার ক্যারাটে কন্যার 'কিক'-এর ঘায়ে কুপোকাত ইভটিজাররা!
বারাসত, ৮ সেপ্টেম্বর : বারাসতের নিরাপত্তা চিরকালই প্রশ্নের মুখে।বারাসতেই দিদি রিঙ্কুকে শ্লীলতাহানির হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে ভাই রাজীবের প্রাণ দেওয়া হোক বা ভরবিকেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালনা। বারাসত, মধ্যমগ্রাম মানেই শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, ইভটিজিং যেন রোজকার দুঃস্বপ্ন। কিন্তু নিজের উপর ধেয়ে আসা বিপদকে ঘুষি, লাথি মেরে রাতারাতি এলাকার 'হিরো' গিয়েছে মধ্যমগ্রামের ১৬ বছরের এক ক্যারাটে কন্যা।
সন্ধ্যাবেলার অন্ধকারে একা বাড়ি ফিরছিল ওই ষোড়শী। মেয়েটিকে একা দেখেই সহজ টার্গেট ভেবে নিজেদের কামনা বাসমা মেটাতে এগিয়ে এসেছিল দুই মাতাল। তখনও তারা জানত না মধ্যমগ্রামের রাস্তায় আগামী কয়েক মুহূর্তে কী হতে চলেছে।[দিল্লিতে প্রতিদিন গড়ে ধর্ষিতা হন ৫ জন, সম্ভ্রম খোয়ান ১২ জন মহিলা : রিপোর্ট]
ওই দুই ব্যক্তি মেয়েটির দিকে হাত বাড়াতেই প্রথমে সজোরে একজনের মুখে একটি ওজনদার ঘুষি বসাল মেয়েটি, অন্যজনের এমন জায়গায় একটা কিক বসালেন যেখানে আঘাত লাগে সবচেয়ে বেশি, সবচেয়ে জোরে। ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের মাটিতে নুইয়ে দিয়ে মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলল ওই ষোড়শী। [মেয়েদের সম্ভ্রম লুঠের ঘটনা 'ভগবানের ইচ্ছে', মন্তব্য অকালি বিধায়কের]
এই ঘটনা প্রসঙ্গে তাকে প্রশ্ন করা হলে, তার উত্তর, "মেরে মুখ ফাটিয়ে দিয়েছি। ওদের যা প্রাপ্য তাই দিয়েছি। আমি ওদের ভয় পাই না।" বলতে বলতে চোখ দুখানা চকচক করে উঠল ষোড়শীর। আরও বলল সে, "বছর খানেক হল ক্যারাটে শিখতে শুরু করেছি। এই এলাকায় মেয়েদের উপর অপরাধের হার যে হারে বাড়ছে তাতে মা-বাবা, আমি ভয় পেতাম হয়তো রাস্তাঘাটে কখনও যৌন হেনস্থার শিকার হতে হবে আমায়। আমি শুধু নিজের প্রতিরক্ষা করতে চেয়েছিলাম, আমার এটা ভেবে ভাল লাগছে যে আমি তা পেরেছি।" [Viral Video: "আমি মেয়ে? আর তাই আপনার অধিকার আছে যখন ইচ্ছে যেখানে খুশি আমায় ছোঁয়ার?"]
কিন্তু ঠিক কী হয়েছিল সেদিন জানতে চাওয়ায় ষোড়শীর জবাব, "ওরা স্থানীয় ছেলে। দলে ৫-৬ জন আছে। মেয়েদের দেখলেই বাজে বাজে কথা বলে, কুরুচিকর অঙ্গভঙ্গী করে। গত কয়েকদিন ধরে আমার ও আমার বন্ধুদের পিছনে লাগছিল। আমি তখনই ঠিক করেছিলাম, বাড়াবাড়ি কিছু করতে এলে আমি জবাব দেব। স্থানীয় লোকজনকে অভিযোগ জানিয়েও কিছু হয়নি, কারোর সাহস নেই ওদের কিছু বলে।"
"সেদিন আমি ক্যারাটে ক্লাস সেরে একা ফিরছিলাম। ট্র্যাক স্যুট পরেই ছিলাম। ওরা দুজন একটা বাইসাইকেলে ছিল। আমাকে দেখতে পেয়ে আচমকাই আমার দিকে তেড়ে আসে। আমাকে সজোরে ধাক্কা দেয়ে। আমি মাটিতে পরে যাই। ওরা আকন্ঠ মদ্যপ অবস্থায় ছিল। আমাকে নোংরা নোংরা অশ্লীল গালিগালাজ করছিল। ['সিপিএম মহিলারা নিজেদের ব্লাউজ ছিঁড়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তোলে', তৃণমূল নেতার মন্তব্যে বিতর্কের ঝড়]
আমি প্রতিবাদ করতেই আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায়। আমি ওদের মধ্যে একজনের শরীরের সবচেয়ে নরম জায়গায় এক ঘুষি মারি, অন্যজনকে মুখে। প্রথমজন আচমকা আঘাতে হতবম্ভ হয়ে যায়। দ্বিতীয়জন ছিটকে পরে। যন্ত্রণায় গোঙাতে থাকে। আমি দেখতে পাই ওই লোকটার মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছিল। প্রথমজন নিজেকে সামলে নিয়ে আবার পাল্টা আমায় মারতে আসে। আমি ওর ঘুষি 'ব্লক' করে সজোরে ফ্রন্ট কিক করি। ব্যস, মাটিতে লুটিয়ে পরে সে। অপরজন ফের আমায় আক্রমণ করতে আসে, আমিও পরপর ঘুষি চালাতে থাকি, মুখে আর গুপ্তাঙ্গে। মারের ঘায়ে লোকটা লুটিয়ে পরে মাটিতে।"
যদিও ষোড়শীর কথায়, কোনওমতে নিজেদের সামলে নিয়ে উঠে সাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায় ওই দুই ইভটিজার, কিন্তু যাওয়ার আগে হুমকি দিয়ে গিয়েছে, তাকে তারা উচিত শিক্ষা দেবে।
রাস্তায় এভাবে দুই গুণ্ডার সঙ্গে এক ষোলো বছরের মেয়েকে ঘুষি, কিক মারতে দেখে হতভম্ব পথচারীরাও। যদিও সাহায্য়ের জন্য তখন কেউই এগিয়ে আসেনি। পুলিশের কাছে গোটা ঘটনাটি জানিয়ে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। যদিও এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।
তবে ষোড়শীর পরামর্শ, আত্মরক্ষা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য প্রত্যেক মেয়েরই মার্শাল আর্টস শেখা উচিত।