তমলুক উপনির্বাচনে লড়াইটা এবার হাড্ডাহাড্ডিই হবে তৃণমূল-সিপিএমে
নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরই প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে যুযুধান দুই প্রতিপক্ষ। শাসকদল প্রার্থী করেছে অধিকারী পরিবারের দিব্যেন্দুকে। অপরদিকে বামফ্রন্ট প্রার্থী করেছে সিপিএমের মন্দিরা পণ্ডাকে।
পূর্ব মেদিনীপুরে শুভেন্দু অধিকারীর ছেড়ে যাওয়া তমলুক লোকসভা আসনে উপনির্বাচন। নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরই প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে যুযুধান দুই প্রতিপক্ষ। গা ঘামাতে শুরু করে দিয়েছে নেতা-কর্মীরা। শাসকদল প্রার্থী করেছে অধিকারী পরিবারের দিব্যেন্দুকে। অপরদিকে বামফ্রন্ট প্রার্থী করেছে সিপিএমের মন্দিরা পণ্ডাকে। লড়ছে বিজেপিও। কংগ্রেসও প্রার্থী দেবে।
এখনও পর্যন্ত যতটুকু হাওয়া উঠেছে, তার ভিত্তিতে বলা যায় দিব্যেন্দুর জয় খুব সহজ হবে না। এই উপনির্বাচনে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। যতই দাবি করা হোক রাজ্য থেকে সিপিএম তথা বামেদের মুছে ফেলা হয়েছে, সেই তত্ত্ব নির্বাচনী ময়দানে খাপ খাবে না। মূল লড়াইটা হবে তৃণমূল ও সিপিএমেরই। তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে ৭ বিধানসভা। তমলুক, পাঁশকুড়া পূর্ব, হলদিয়া, নন্দকুমার, মহিষাদল, নন্দীগ্রাম ও ময়না। এর মধ্যে তমলুক, পাঁশকুড়া পূর্ব ও হলদিয়া বামেদের দখলে।
বাকি চার আসন শাসকদলের। বিধায়কের সংখ্যাবিচারে এবং চলতি হাওয়া তৃণমূলের দিকে থাকলেও সিপিএম ভিতরে ভিতরে নিজেদের পায়ের তলার মাটি খানিকটা শক্ত করেছে। তারপরও মন্দিরা পাণ্ডার ঝকঝকে লড়াকু ইমেজ সিপিএমকে বাড়তি অক্সিজেন জোগাচ্ছে। ফলে জেলাটা অধিকারী পরিবারের হলেও টুসকি মেরে দিব্যেন্দু জয় তুলে নেবেন এমন সরলীকরণ করতে চাইছে না তৃণমূল নেতাদেরই একাংশ। একশো শতাংশ ঠিক, হাওয়া তৃণমূলের দিকে। তারপরও দিব্যেন্দুকে কেন দাঁতে দাঁত চেপে লড়তে হবে?
কারণ অনেকগুলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে প্রথম কারণ অবশ্যই পরিবারতন্ত্রের বাধা। জেলাজুড়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ নেতাকর্মী থাকলে রাজ্য নেতৃত্ব সেই অধিকারী পরিবারের বাইরে যেতে পারল না- এটাই ক্ষুব্ধ করে তুলেছে তৃণমূল নেতাদের বড় একটা অংশকে। তাঁদের মতে, কেন বারবার অধিকারী পরিবার থেকেই প্রার্থী করা হবে। একটা ক্ষোভ কিন্তু সঞ্চার হয়েছে সারা জেলাতেই। সারা বছর মাঠে-ময়দানে থাকবেন অন্যরা, লাঠি-বোমা খাবেন অন্যরা, জনসভায় ভিড় বাড়াবেন অন্যরা, অথচ নির্বাচন এলে গুরুত্ব পাবে জেলার একটা মাত্র পরিবার! অধিকারী পরিবার।
এ
পরিবার
এমনই
একটা
পরিবার,
যে
পরিবারে
বাবা
শিশির
অধিকার
সাংসদ।
বড়
ছেলে
শুভেন্দু
অধিকারী
সাংসদ
ছিলেন,
বর্তমানে
রাজ্যের
মন্ত্রী।
মেজ
ছেলে
দিব্যেন্দু
বিধায়ক।
ছোট
ছেলে
সৌম্যেন্দু
কাঁথি
পুরসভার
চেয়ারম্যান।
প্রশ্ন
উঠেছে,
রাজ্যে
ক্ষমতায়
দল।
জেলার
প্রতিটি
স্তরেও
ক্ষমতা
তাঁদেরই
হাতে।
সবক'টি
স্তরেই
শীর্ষপদ
দখল
করে
রেখেছেন
সেই
অধিকারী
পরিবার।
কিন্তু
সব
ক্ষীর
একা
অধিকারী
পরিবার
খাবে
কেন?
নতুন
মুখকে
প্রার্থী
করে
জিতিয়ে
আনার
সূবর্ণ
সুযোগ
তো
এখনই।
তবু
কেন
সেই
অধিকারী
পরিবার
থেকেই
প্রার্থী।
আবার একটা উপনির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি করে কেন দিব্যেন্দুএক প্রার্থী করা হল, তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন তৃণমূলের একাংশই। দ্বিতীয় কারণ, দলের মধ্যে তীব্র গোষ্ঠীকোন্দল। প্রতিনিয়ত এলাকার দখল নেওয়ার প্রশ্নে নিজেদের মধ্যে মারামারি, বোমাবাজি ইত্যাদি লেগে রয়েছে। রয়েছে দুর্নীতি ও স্বজন পোষণ। স্বাভাবিকভাবে এসব বহু মানুষকে তৃণমূল বিমুখ করে তুলেছে।
এই সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে চাইছে সিপিএম। তাদের হারানোর কিছু নেই। জয় হবেই এমন দাবি করছে না সিপিএম। তবে লড়াইটা ঠিকঠাক দিতে পারলে যে হিসেবটা ওলটপালট করে দেওয়া যায়, তা কিন্তু বুঝেতে পেরে গিয়েছেন সিপিএম প্রার্থী ও কর্মীরাও। জয় নয়, তাঁদের কাছে লড়াইটাই পাখির চোখ করেছে।