দুর্নীতি নিয়ে কামান দেগে দলের কোপে স্বপনকান্তি
কলকাতা, ২৫ ফেব্রুয়ারি : ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি!
ফের একবার দলের লোকের বিদ্রোহের ঘটনায় অস্বস্তি অব্যাহত শাসক দলের অন্দরে।
এবার নিজের দলেরই বিধায়কের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলে দলবিরোধী কাজ করায় ও এদিন বিধানসভায় ধরনা দেওয়ায় সিউড়ির বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষকে সাসপেন্ড করল তৃণমূল।
ঘটনায় বিব্রত শাসকদল অবশ্য পাল্টা আক্রমণের রাস্তাই বেছে নিয়েছে। "অন্য দলের মদতে এসব করছে স্বপন, দম থাকলে ইস্তফা দিয়ে এসব করা ইচিত ছিল" বলে স্বপনকান্তিকে কটাক্ষ করেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। পুরমন্ত্রী এদিন বলেন, "আমি নিজে স্বপনকে আলোচনার জন্য ডেকেছিলাম আজ কিন্তু ও আসেনি।" তাঁর বক্তব্য, "স্বপনের যা অভিযোগ ছিল তা নিয়ে তদন্তের পাশাপাশি ওর বিরুদ্ধেও তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।"
অন্যদিকে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সরকার ও দলকে বিব্রত করতেই এই পদক্ষেপ স্বপনের। তৃণমূল নেতাদের কটাক্ষ, তলে তলে বহুদিন ধরেই অন্য দলে নাম লেখানোর ফিকির করছেন স্বপনবাবু। আর তাই এই 'নাটক'।
দুর্নীতি নিয়ে দল ব্যবস্থা না নিলে অন্য পথে হাঁটবেন বলে তিনি আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। দল অবশ্য ব্যবস্থা নেয়নি। সিউড়ি পুরসভার আর্থিক দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে তাই এ বার আর রাজ্য সরকারের উপর নয়, বরং কেন্দ্রের উপরেই আস্থা রাখছেন তৃণমূলের এই বিক্ষুব্ধ বিধায়ক। গতকাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডুকে চিঠি লিখে দেখা করার আর্জি জানান। তারপর আজ তাঁর এই বিক্ষোভে অন্য দলের কলকাঠি নাড়াই দেখছে শাসকদল।
কিন্তু কেন হঠাৎ বিদ্রোহী হয়ে উঠলেন সিউড়ির বিধায়ক স্বপনকান্তি যে দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ আনতে হল তাঁকে? স্বপনবাবু অভিযোগ, জল প্রকল্প এবং বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদানের প্রায় ১০ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা সিউড়ি পুরসভা থেকে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে। গরমিলের কথা আঁচ করে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (সুডা) কাছে বেশ কয়েকটি চিঠি লিখেছিলেন। একটিরও জবাব পাননি।
স্বপনবাবু এদিন জানান, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাধ্য হয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন তিনি। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি বলে এদিন প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে বিধানসভাকেই বেছে নেন তিনি। পাশাপাশি ফের একবার দলের নেতাদের কটাক্ষ করে স্বপনবাবু বলেন, "সাসপেনশনের চিঠি আদৌ আসবে তো?"। পাল্টা হুঙ্কার ছেড়ে স্বপনবাবুর চ্যালেঞ্জ,"সবকিছু সামনে আসুক। আড়াই বছর ধরে শুধু স্বান্ত্বনা পেয়েছি। ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।"
সিউড়ি শহরে পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। শহরের পরিধি আর লোক বাড়ায়, সঙ্কট আরও বেড়েছে। ২০০৭ সালে সিউড়িতে জেএনএনইউআরএম (জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিন্যুয়াল মিশন) প্রকল্পে শহরের জন্য জলপ্রকল্পের ঘোষণা হয়। সেই প্রকল্পের টাকা নিয়ে দুর্নীতি ও নয়ছয়ের অভিযোগেই সরব হয়েছেন স্বপনকান্তি ঘোষ।
সাসপেন্ড হওয়ার পর স্বপনবাবু জানিয়ে দিয়েছেন, অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তিনি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবেন না।