ক্লাসে বেলেল্লাপনার প্রতিবাদে নিগৃহীত শিক্ষিকা, অভিযুক্তের পাশে টিএমসিপি
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বুধবার বিকেলে লাইব্রেরি থেকে ফিরছিলেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপিকা সাত্যকি পোদ্দার। তখন কলেজ ছুটি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তিনি দেখেন, একটি ঘরে আলো জ্বলছে, পাখা চলছে। তা বন্ধ করতে তিনি ঘরে ঢোকেন। তখনই দেখতে পান ক্লাসঘরের এক কোণে কলেজেরই এক ছাত্র ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে রয়েছে এক ছাত্রীর সঙ্গে। দু'জনের ঊর্ধাঙ্গ অনাবৃত অবস্থায় ছিল। এই দৃশ্য দেখে শিক্ষিকা চিৎকার করে ওঠেন। সুখবিলাসে ব্যাঘাত ঘটায় ছাত্রটি তেড়ে আসে দিদিমণির দিকে। কেন তিনি ঘরে ঢুকেছেন, এই প্রশ্ন করা হয়। চেঁচামেচিতে জড়ো হয়ে যান কলেজের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁরা ছাত্রটিকে ভর্ৎসনা করে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।
কিন্তু ঘটনা এখানে শেষ হয়নি। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ যখন সাত্যকিদেবী কলেজ থেকে ছোটনীলপুরে বাড়ির দিকে হাঁটা লাগিয়েছেন, তখন রাস্তায় তাঁকে ঘিরে ধরে ওই ছাত্র ও তার শাগরেদরা। প্রথমে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করা হয়। তার পর শিক্ষিকার গালে ছাত্রটি সপাটে চড় মারে। এমন অপমানে তিনি কাঁদতে শুরু করেন। তাতেও ক্ষান্ত দেয়নি অভিযুক্ত। সাত্যকিদেবীকে মাটিতে ফেলে লাথি মারা হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে ওই শিক্ষিকার ছেলে মাকে বাঁচাতে এলে তাকেও মারধর করা হয়।
বৃহস্পতিবার কলেজ খুলতেই টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদ ময়দানে নামে। তারা সাত্যকি পোদ্দারের পদত্যাগের দাবিতে মিছিল করে। এর পর ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ হাজরা অধ্যক্ষ শিবপ্রসাদ রুদ্রের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন।
ক্ষুব্ধ শিবপ্রসাদবাবু বলেন, "বুধবার আমাকে ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ছেলের নাম আকাশ দত্ত। সে বিএ পাশ কোর্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। কিন্তু স্মারকলিপিতে দেখলাম, ছেলেটির নাম বিকাশ দাস। সে বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র। কোনটা ঠিক, ছাত্র সংসদ নিজেরাই জানে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ নিচ্ছি।"
কেন কলেজে বেলেল্লাপনাকে সমর্থন করছে টিএমসিপি? ছাত্রনেতা প্রদীপ হাজরা বলেন, "ম্যাডাম ওর ওপর শারীরিক অত্যাচার চালিয়েছে। ওকে নখ দিয়ে আঁচড়ে দিয়েছে। তাই প্রতিবাদ করেছি।" কিন্তু তার ফলে শিক্ষিকাকে জনসমক্ষে মারধর কেন করা হবে, তার সাফাই দিতে পারেনি টিএমসিপি।
সাত্যকিদেবী বলেন, "১৫ বছর ধরে পড়াচ্ছি। ছাত্রছাত্রীরা আমার কাছে সন্তানতুল্য। তারা এভাবে আমার সঙ্গে ব্যবহার করবে, আমি কোনওদিন স্বপ্নেও ভাবিনি।"
কিছুদিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের ন্যায্য আন্দোলন নিয়ে অনেক কুৎসা রটিয়েছিল টিএমসিপি। ছাত্রনেতা শঙ্কুদেব পণ্ডাও 'নৈতিকতার পাঠ' দিতে চেষ্টা করেছিলেন। অথচ এখন কলেজে বেলেল্লাপনা চললেও তাকেই সমর্থন করে ময়দানে নেমেছে টিএমসিপি।