একটি ঘাসে দু'টি ফুল, দুমুখো তৃণমূল!
কিন্তু এত চেঁচামিচির কী ছিল? বিজেপি সাংসদ একটা 'ব্লান্ডার' করে ফেলেছেন বটে, তো একটা 'নিঃশর্ত ক্ষমা' চাইয়ে নিলেই তো হতো। আর ওই বিজেপি সাংসদকেও বলিহারি, যখন অভিযোগ উঠেইছি তা অস্বীকার করে সবাইকে কেন খেপিয়ে দেওয়া। 'আপনারা আমায় ক্ষমা করুন' বললেই তো সব মিটে যেত। তৃণমূল দলনেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাময়ী। যত বড় দোষই করুন ক্ষমা চাইলেই উনি ঠিক ক্ষমা করে দেবেন। ঠিক যেমন তাপস পাল, আরাবুল, মণিরুলদের করে আসছেন।
থুরি, দেখুন ভুলেই গিয়েছিলাম যে গতকালের অভিযুক্ত সাংসদ আবার তৃণমূলের নন কিনা, উনি যে বিরোধী পক্ষের। তবে তো মুশকিল। নিজের দলের 'ছেলেমেয়ে'দের বাইরে অন্য কোনও দলের সদস্যদের উপর তিনি আবার সেভাবে সদয় নন কিনা।
এই যে ধরুন তাপসবাবু সেদিন কত কথাই না বললেন। যেমন ধরুণ, 'আমি অনেক বড় রংবাজ, বহু মস্তানি করেছি....পকেটে মাল নিয়ে ঘুরি..' গোছের কথা বার্তা। এ তো তাও নয় ধরনাম দুধভাত, কিন্তু ওই যে বললেন "সিপিএম এমকে গুলি করে দেব, গুষ্টি শেষ করে দেব", সবচেয়ে মারাত্মক "ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেব রেপ করে চলে যাবে।" কিন্তু তাতে কী? মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ভুল করেছে দল সতর্ক করেছে আর কী চান ওকে মেরে ফেলব? "ব্লান্ডার" করেছিল ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে। আবার কী?
তৃণমূল মহিলাদের হেনস্থা করায় দলে ক্ষোভ,অথচ তাপস পালের মন্তব্যে নির্বিকার তাঁরাই
অথচ এই মুখ্যমন্ত্রীই এখন গলা ফাটাচ্ছেন কেন বিজেপি সাংসদ তাঁর দলের মহিলা সাংসদদের বিরুদ্ধে কটু কথা বলেছেন। গণতন্ত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। ওই বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার প্রশ্ন তুলছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ওই সাংসদ তৃণমূলের মহিলা সাংসদদের বেশ্যা বলেছেন, বলেছেন, জামা খুলে পেটাবেন। আর তাতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া এই ধরণের কুৎসিত শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে। কী ভাষার ছিড়ি। একটি দল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এটা দুঃখজনক একজন সাংসদ লোকসভার অন্দরে অসংসদীয় ভাষার প্রয়োগ করছেন। আরও কত কীই না বললেন।
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, আপনাকে একটাই প্রশ্ন, তাপস পালের ভাষা শালীনতার মর্যাদা লঙ্ঘন করেনি? অনুব্রতর হুমকি কখনও গণতন্ত্রের উপর আঘাত আনেনি? নাকি সংসদের বাইরে তাপস অনুব্রতরা যা বলার বলেছে বলে ওঁরা 'ধোয়া তুলশীপাতা'। তখন কেন আওয়াজ তোলেননি। কেন এদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়ে বুঝিয়ে দেননি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দল-রং নির্বিশেষে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন।
আপনি বলছেন, নয়া সরকার সমালোচনা নিতে পারেনা। ওদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললে মাথা গুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ওরা। আপনি কী ভুলে গিয়েছেন অম্বিকেশ মহাপাত্র, শিলাদিত্য চৌধুরীকে। একজন আপনাকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছিলেন আর এক জন আপনার কাজের খতিয়ান চেয়ে প্রশ্ন ছুঁড়েছিলেন, দুজনকেই জেলে যেতে হয়েছিল। শিলাদিত্য আপনার কাছ থেকে মাওবাদী তকমাও পেয়েছিল। পাকর্স্ট্রিট গণধর্ষণ কাণ্ডের দায় আপনার পুলিশ-প্রশাসনের উপর বর্তাবে তাই বলেই দিলেন ধর্ষণ হয়নি ওটা সাজানো ঘটনা। পীড়িতার কথা তখন ভাবেননি কেন?
বিরোধীরা অন্যায় করলে তাও যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, দলের ভুলই বা গ্রহণযোগ্য হবে কেন? তৃণমূলের চিহ্নে ২টি ফুল রয়েছে। সেই দুটি ফুল ধীরে ধীরে আপনার দলের দুমুখো রাজনীতির প্রতীক হয়ে উঠছে। দলের স্বার্থে, রাজ্যের স্বার্থে অন্তত এই ভাবমূর্তি বদলাতে হবে দলকে নয়তো বিধানসভা ভোটেই না কোনও অঘটন ঘটে যায়।