রোজভ্যালি কাণ্ডে সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
তাপস পালের পর এবার রোজভ্যালি কাণ্ডে গ্রেফতার তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। দুদফা জেরার পর তাঁকে গ্রেফতার করল সিবিআই।
কলকাতা, ৩ জানুয়ারি : রোজভ্যালি-কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর মোড়। তাপস পালের গ্রেফতারের চারদিনের মাথায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। জিজ্ঞাসাবাদে একাধিক অসঙ্গতি পান সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। শুধু তাই নয়, তৃণমূল সাংসদের থেকে একাধিক প্রশ্নের উত্তর পাননি সিবিআই আধিকারিকরা। সেই উত্তরগুলি খুঁজে বার করতেই শেষমেশ তৃণমূলের লোকসভার সাংসদকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেন সিবিআই আধিকারিকরা। সেই মতো দিল্লির কাছ থেকে গ্রেফতারের জন্যে অনুমতি চাওয়া হয়। দিল্লি থেকে সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরেই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে সিবিআই।[রাজনৈতিক প্রতিশোধ নিতেই গ্রেফতারি, পার পাবেন না মোদী, লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি মমতার]
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম ধাপে বেশ কিছু নথি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে তুলে ধরে সিবিআই। সেই নথি অনুযায়ী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় যে উত্তর দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট ছিলেন সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিকরা। এমনকি, বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তরও তৃণমূলের সাংসদ এড়িয়ে যান বলে জানা গিয়েছে। এরপরেও তাঁকে আরও একবার সুযোগ দেয় সিবিআই। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সই করা একাধিক কাগজ তাঁর সামনে রেখে ক্রশ-কশ্চেন করা হয়। কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াতেও বেশ কিছু অসঙ্গতি পান তদন্তকারী আধিকারিকরা।[সুদীপবাবুর গ্রেফতারকে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত, বিলম্বিত ও প্রত্যাশিত ঘটনা বলছেন রাজ্যের বিরোধীরা ]
শুধু তাই নয়, রোজভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডুকে জেরা করে একাধিকবার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম পান সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিকরা। এরপরেই ডিএলএফ বিল্ডিংয়ে তল্লাশি চালিয়েছিলেন সিবিআই আধিকারিকরা৷ সেখান থেকে একাধিক রোজভ্যালির কাগজ উদ্ধার করেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। উদ্ধার হওয়া একাধিক কাগজে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম পায় সিবিআই। হাতে এসেছিল কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক৷[সুদীপের গ্রেফতারের পরেই জরুরি বৈঠক ডাকল তৃণমূল ]
বিগত ছ'মাস ধরে সেসব তথ্য খতিয়ে দেখে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানতে পারেন রোজভ্যালির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যোগ ছিল এই তৃণমূল সাংসদের৷ জানা যায়, একাধিকবার স্ত্রীকে নিয়ে ইউরোপ ভ্রমণ করেছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সমস্ত ভ্রমণের টাকা দেয় রোজভ্যালি। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে যথাযথভাবে তদন্তকারী আধিকারিকদের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দিতে পারেননি বলেই জানা যায়। পাশাপাশি তাঁর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়, গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে তাঁর কীভাবে পরিচয় হয়েছিল?[রোজভ্যালিকাণ্ডে ১১২ জনের তালিকা সিবিআইয়ের হাতে, রয়েছে সিপিএম নেতা-নেত্রীর নামও]
রোজভ্যালি কর্তাকে সাহায্যের জন্য একবার চিঠি দিয়েছিলেন সুদীপ৷ সেই চিঠি একজন সাংসদ হিসাবে কেন দেওয়া হল? তিনি কি জানতেন না যে রোজভ্যালি একটি চিটফান্ড? সেই বিষয়েও প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। পাশাপাশি সুদীপ ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন চাকরিও পেয়েছিলেন রোজভ্যালিতে৷ তার পরিবর্তে কি রোজভ্যালির ব্যবসা প্রসারে সাহায্য করেছিলেন সুদীপ? প্রথম ধাপে এমন একাধিক প্রশ্ন করা হয় তাঁকে, কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তরে একাবারেই সন্তুষ্ট ছিলেন না সিবিআইয়ের পাঁচ দুঁদে গোয়েন্দা। সেজন্যে দ্বিতীয় দফায় ফের তাঁকে জেরা শুরু করে সিবিআই। সেক্ষেত্রেও বেশ কিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়। এরপরেই গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত।
জানা গিয়েছে, আজ মঙ্গলবার রাতেই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ভুবনেশ্বর রওনা দেবে সিবিআই। সাড়ে ১১ টার ইন্ডিগোর বিমানে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। কিছুক্ষণের বিশ্রাম দিয়ে এদিন রাতেই ফের জেরা করা হবে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আগামীকাল বুধবার ভুবনেশ্বর আদালতে তোলা হবে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।