সারদা-কাণ্ডে গ্রেফতার তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৃঞ্জয় বসু
২০১০ সালের জুন মাসে মিডিয়া ব্যবসায় নামে সারদা গোষ্ঠী। দু'টি দৈনিক সংবাদপত্র যথাক্রমে 'সকালবেলা' ও 'বেঙ্গল পোস্ট' দিয়ে তাদের পথচলা শুরু হয়। সঙ্গে 'চ্যানেল টেন' কিনে নেন সুদীপ্ত সেন। এর পর মঞ্চে আবির্ভাব হয় কুণাল ঘোষের। তখনও তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে সাংসদ হননি কুণালবাবু। তিনি তখন বাংলা দৈনিক 'সংবাদ প্রতিদিন'-এর সহযোগী সম্পাদক ছিলেন। বিভিন্নভাবে তিনি ভয় দেখাতে শুরু করেন সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে। বলেন, দাবি মতো টাকা না দিলে মিডিয়া ব্যবসা বন্ধ করে দেবেন। তখন রাজ্যে পালাবদলের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। অভিযোগ, কুণাল ঘোষের গোটা অপকর্মে মদত দিয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা 'সংবাদ প্রতিদিন' পত্রিকার সম্পাদক সৃঞ্জয় বসু।
আরও
পড়ুন:
গোটা
তৃণমূল
দলটাই
জেলে
যাবে,
সৃঞ্জয়ের
গ্রেফতারির
পর
কটাক্ষ
বিজেপির
আরও
পড়ুন:
চোরের
হয়ে
দালালি
করছে
সিবিআই,
সারদা
নিয়ে
ফের
ক্ষিপ্ত
মমতা
২০১১ সালের মে মাসে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। এর পর কুণাল ঘোষ ও সৃঞ্জয় বসু স্বাভাবিকভাবে আরও ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন। সারদা মিডিয়ার সঙ্গে 'সংবাদ প্রতিদিন'-এর একটি চুক্তি হয়। বলা হয়, সারদা মিডিয়াকে সম্পাদকীয় সমর্থন (এডিটোরিয়াল সাপোর্ট) দেবে সৃঞ্জয়বাবুর পত্রিকা। বিনিময়ে তাঁকে প্রতি মাসে ৬০ লক্ষ টাকা দিতে হবে। অভিযোগ, ওই টাকা ছাড়াও সুদীপ্ত সেনকে ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন সময় সৃঞ্জয় বসু মোটা টাকা নেন। মিডল্যান্ড পার্কে সারদার অফিসে গিয়ে তিনি এবং কুণাল ঘোষ বারবার সুদীপ্ত সেনকে হুমকি দিতেন বলে অভিযোগ। সুদীপ্তবাবু নিমরাজি হলে শাসক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা বলে তাঁরা সারদা গোষ্ঠীকে লাটে তুলে দেওয়ার হুমকি দিতেন। এমনকী, সুদীপ্ত সেন বেশ কয়েকবার 'সংবাদ প্রতিদিন'-এর প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিটের অফিসে গিয়েছেন। কেন গিয়েছেন, এর সদুত্তর সৃঞ্জয়বাবু দিতে পারেননি। ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায়ের বিষয়টি সুদীপ্তবাবু আগেই জানিয়েছিলেন সিবিআইকে। তখন থেকেই আটঘাট বেঁধে এগোতে থাকেন গোয়েন্দারা।
কুণাল ঘোষ ও সৃঞ্জয় বসু বারবার সুদীপ্ত সেনকে ব্ল্যাকমেল করেছেন বলে অভিযোগ
এর আগে সৃঞ্জয়বাবুকে দু'বার জেরা করে ইডি। একবার সিবিআই। এ দিন ফের ডেকে পাঠানো হয়। তিনি সকাল এগারোটা নাগাদ সল্ট লেকের সিজিও কমপ্লেক্সে আসেন। কিন্তু তাঁর কথায় বিস্তর অসঙ্গতি পাওয়া যায়। অনেক কথা তিনি চেপে যান। সেটা বুঝতে পেরে সিবিআই বারবার তাঁকে বলে, সত্যি কথাটা বলতে। কিন্তু মুখে কুলুপ আঁটেন তিনি। শেষ পর্যন্ত বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ তাঁকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেয় সিবিআই। তাঁর বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেল, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ইত্যাদি অভিযোগ আনা হয়েছে।
সৃঞ্জয়বাবুর গ্রেফতারির খবর দিল্লিতে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান অর্থাৎ উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সৃঞ্জয় বসু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুবই স্নেহভাজন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে 'টুম্পাই' বলে সম্বোধন করেন। তৃণমূলের মুখপত্র 'জাগো বাংলো' পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বেও ছিলেন সৃঞ্জয়বাবু। 'সংবাদ প্রতিদিন'-এর নিজস্ব ছাপাখানা থেকে 'জাগো বাংলা' ছাপা হয়। তিনি গ্রেফতার হওয়ায় রাজনীতিক ক্ষেত্রে আরও ব্যাকফুটে চলে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সিবিআই অফিসাররা জানান, এমন আরও কয়েকজন রাঘববোয়ালকে শীঘ্র গ্রেফতার করা হবে।