মধ্যযুগীয় বর্বরতার শিকার সাড়ে তিন বছরের শিশু, এখনও বের করা যায়নি শরীরে বিঁধে থাকা সূচ
সাড়ে তিন বছরের শিশুর ওপর অমানুষিক অত্যাচার। ক্ষত-বিক্ষত সারা দেহ, শরীরে বিঁধে রয়েছে ৮টি সূচ,একাধিক হাড় ভাঙা। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় অস্ত্রোপচারের আগে স্থিতিশীল হওয়ার অপেক্ষায় এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা।
পুরুলিয়ার সাড়ে তিন বছরের শিশুর চিকিৎসায় একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হল এসএসকেএম হাসপাতালে। শনিবারই ওই শিশুটিকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে এসএসকেএমে নিয়ে আসা হয়। তবে তার শরীরে বিঁধে থাকা ৮টি সূচ এখনই বের করতে এখনই অস্ত্রোপচার করা হবে না বলেই এসএসকেএম সূত্রে জানা গিয়েছে। তার শারীরিক অবস্থার একটু স্থিতিশীল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাইছেন চিকিৎসকেরা। অন্যদিকে এখনও বেপাত্তা অভিযুক্ত সনাতন ঠাকুর। মুখে কুলুপ শিশুটির মায়েরও।[আরও পড়ুন:আজব এক ছবি, যা নিয়ে তোলপাড় ইন্টারনেট]
গত সোমবার জ্বরে আক্রান্ত ওই শিশুটিকে পুরুলিয়ার দেবেন মাহাত হাসপাতালে ভর্তি করে প্রাক্তন পুলিশকর্মী দেবেন মাহাত। এরপর থেকেই অবশ্য তার কোনও খোঁজ নেই। এদিকে শিশুটির অবস্থা দেখে চোখ কপালে উঠে যায় চিকিৎসকদের। শিশুটির সারা দেহে আঁচড়- কামড়ের দাগ, সারা গায়ে কালশিটে, হাত সহ একাধিক হাড় ভাঙা। যৌনাঙ্গও ক্ষতবিক্ষত। ছোট্ট ওই শিশুটির ওপর যে অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে তা দেখেই বুঝে যান চিকিৎসকেরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেলার চাইল্ডলাইনে খবর দিলেও তারা ঘটনাস্থলে চলে আসে। শিশুটির মা জানান, স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর পুরুলিয়ার নাদিয়াড়া গ্রামে প্রাক্তন পুলিশকর্মী সনাতন ঠাকুর তাদের আশ্রয় দেয়। সনাতনই ওই শিশুটির এই অবস্থা করেছে বলে অভিযোগ। এরপর থেকে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন ওই মহিলা।[আরও পড়ুন:শরীরে ৭৫টি পিন বিঁধে, অথচ কিছুই জানেন না রোগী, ভিমরি খাওয়ার জোগাড় চিকিৎসকদের]
এরপরই সনাতন ঠাকুরের বিরুদ্ধে শিশুর ওপর যৌন নির্যাতনের মামলা দায়ের করা হয়। এদিকে শিশুটির শরীরের এক্স-রে করার পর রীতিমত শিউরে উঠেছেন চিকিৎসকেরা। তার বুক থেকে তলপেট পর্যন্ত মোট ৮টি সূচ বিঁধে রয়েছে। এই অবস্থায় গত শুক্রবারই তাকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানেও অস্ত্রোপচার সম্ভব না হওয়ায় শনিবার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় এই শিশুটিকে। শিশুটিকে সুস্থ করতে তুলতে সবরকম ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজা। রবিবার তার অস্ত্রোপচারের কথা থাকলেও এই অবস্থায় অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না চিকিৎসকেরা। আপাতত তার শারীরিক অবস্থা একটু স্থিতিশীল হওয়ার অপেক্ষা করছে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড।
অন্যদিকে তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত অভিযুক্ত সনাতন ঠাকুরের কোনও হদিশ পায়নি পুলিশ। নির্যাতিত শিশুটির মা তার বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন। দুজনের মধ্যে সম্পর্কও গড়ে উঠেছিল বলে মনে করছে পুলিশ। অভিযুক্ত সনাতন ঝাড়-ফুঁক, তন্ত্রসাধনা করত বলে জানিয়েছন গ্রামবাসীরা। তন্ত্রসাধনা করতে গিয়েই শিশুটির শরীরে সূচ ফোটানো হয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। অবশ্য কীভাবে শিশুটির এই অবস্থা হল তা নিয়ে মুখ খোলেনি তার মা।