পরিকাঠামো আছে ক্রেতা নেই, পঞ্চায়েত ভোটে বড় ইস্যু হতে চলেছে কিষান মান্ডি
স্টল থেকে শুরু করে গুদাম, কৃষক সহায়তা কেন্দ্র— সবকিছুই গড়ে তোলা হয়েছে। রাজ্যে নয় নয় করে গড়ে উঠেছে ১৮৬টি কিষান মান্ডি। কিন্তু সেখানে দেখা নেই একজন ক্রেতারও।
কলকাতা, ২২ এপ্রিল : স্টল থেকে শুরু করে গুদাম, কৃষক সহায়তা কেন্দ্র- সবকিছুই গড়ে তোলা হয়েছে। রাজ্যে নয় নয় করে গড়ে উঠেছে ১৮৬টি কিষান মান্ডি। কিন্তু সেখানে দেখা নেই একজন ক্রেতারও। প্রায় ৫০০ কোটি টাকা খরচ করেও পরিষেবা পৌঁছচ্ছে না গ্রাহকদের কাছে। মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সাধের প্রকল্প। এটাই এখন বড় ইস্যু হতে চলেছে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে। রাজ্য সরকারও তা বুঝতে পেরে কোমর বেঁধে নেমেছে কিষাণ মান্ডি গুলিতে প্রাণ সঞ্চার করতে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্যের প্রতি ব্লকে ব্লকে ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে ১৮৬টি কিষান মান্ডি। সরকারি তথ্য অনু়যায়ী রাজ্যে মোট ৩৪১টি ব্লকের মধ্যে ১৮৬টি ব্লকে কিষান মান্ডির কাজ চলছে। তার মধ্যে ১৫২টির কাজ একেবারেই সম্পূর্ণ। বাকি ৩৪টিও কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ১৮৬টি কিষান মান্ডির জন্য ইতিমধ্যেই খরচ হয়ে গিয়েছে ৫০০ কোটি টাকা।
কিন্তু ৫০টি কিষান মানিচ ঠিকঠাক চলছে বলে জানা গিয়েছে। বাকিগুলির হাত শোচনীয়। সেই কারণেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার। পঞ্চায়েত ভোট যত এগিয়ে আসবে, ততই এটা ইস্যু তৈরি হবে। এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে ইতিমধ্যেই কমিটি গঠন করে ফেলেছে রাজ্য। রাজ্য চাইছে কৃষি সচিব, কৃষি বিপণন সচিব ও কৃষি বিষয়ক উপদেষ্টাকে নিয়ে গড়া কমিটিকে দিয়ে কিষান মান্ডিগুলিকে সচল করতে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষি পণ্য উৎপাদনের যে কোনও কাজের ক্ষেত্র হিসেবে এই মান্ডিগুলিকে ব্যবহার করতে হবে। শুধু কিষান মান্ডি ভাবলে চলবে না, বিকল্প কেন্দ্র হিসাবে সেগুলিকে গড়ে তোলা প্রয়োজন। স্থানীয় কৃষক, সব্জি ব্যবসায়ীদের ক্লাস্টার গড়ে তার কর্মকাণ্ড বাড়ানো যেতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে সেগুলি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
রাজ্য যখন এই মান্ডিগুলি গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেই সিদ্ধান্তকে ঘিরে সমালোচনাও হয়েছিল যথেষ্ট। বিরোধীদের বক্তব্য ছিল, প্রতি ব্লকে এমন মান্ডি গড়ার বাস্তবতাই নেই। জোর করে কিষান মান্ডি গড়লে তা অকেজো হয়েই পড়ে থাকবে। অবশ্য একাংশের মত, জনপ্রিয় হতে সময় লাগবে মান্ডিগুলি।
এ প্রসঙ্গে শিলিগুড়ির কাছে মাল্লাগুড়িতে পাইকারি বাজারের উদাহারণ তুলে ধরা হয়। রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতরের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই বাজারে প্রথম কয়েক বছর আগ্রহই দেখাননি ক্রেতা-বিক্রেতারা। এখন ঠিক বিপরীত চিত্র সেই বাজারের। উত্তরবঙ্গের ফালাকাটা, ময়নাগুড়ি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর, হুগলির সিঙ্গুরের মতো মান্ডিগুলি মোটামুটি ভালোই চলছে। কাঁকসা, গুসকরা, মল্লারপুরের মান্ডিগুলির পরিস্থিতি শোচনীয়।
মুখ্যমন্ত্রী কিষান মান্ডিগুলি গড়েতে চেয়েছিলেন কৃষি বিপণনে ব্লক স্তর পর্যন্ত উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে। যেখানে কোনও কৃষক সরাসরি তার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। সে কারণেই মান্ডিগুলিতে পরিকাঠামোগত সব ব্যবস্থাই গড়ে তোলা হয়েছে। তার পরেও সেগুলিকে পরিপূর্ণ বাজার হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। রাজ্যের খাদ্য দপ্তরের তরফেও ধান, চাল কেনার কেন্দ্র হিসাবে এই মান্ডিগুলিকেই ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার মান্ডিগুলো জনপ্রিয় করতে কোনো চেষ্টারই কসুর করছে না।