টানা বৃষ্টিতে রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি, ফুঁসছে নদী, প্লাবিত গ্রামের পর গ্রাম
টানা বৃষ্টির জেরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজ্যে। দক্ষিণবঙ্গে বিভিন্ন জেলায় ফুঁসছে নদী। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এখনও তিনদিন চলবে ভারী বৃষ্টি। মোকাবিলায় তৈরি প্রশাসন।
টানা বৃষ্টির জেরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজ্যে। দক্ষিণবঙ্গে বিভিন্ন জেলায় ফুঁসছে নদী। জল বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। বাঁকুড়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও পশ্চিম মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার শতাধিক গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বহু জায়গাতেই বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ। সাধারণের যাতায়াতে একমাত্র ভরসা নৌকাই।
আবহাওয়াও ফুঁসছে। এখনও তিনদিন এই বৃষ্টি চলবে বলে জানানো হয়েছে আবহাওয়া দফতরের তরফ থেকে। রাজ্য সরকারের তরফে তাই সেচ দফতরের সমস্ত কর্মীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। নবান্নে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বদা যোগাযোগ রাখছেন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে।
তিনদিনের অবিরাম বৃষ্টির জেরে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, চন্দ্রকোণা, কেশপুর ও ক্ষীরপাই-এর বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ঘাটালের মনসাতলা চাতাল জলের তলায়। ঘাটাল-চন্দ্রকোণা রোডের উপর দিয়ে বইছে শিলাবতী নদীর জল। ফলে ঘাটালের সঙ্গে চন্দ্রকোণা ও ক্ষীরপাইয়ের যোগাযোগর একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে নৌকা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর-মেদিনীপুর রোড এবং ক্ষীরপাই-আরামবাগ রোডও জলের তলায়। সম্পূর্ণ বন্ধ এই দুই রোডের যান চলাচল। অতিবৃষ্টির জেরে ব্যারেজগুলি থেকে জল ছাড়া হচ্ছে। ফলে জলস্তর বাড়ছে শিলাবতী ও কংসাবতী নদীতে। ফলে পশ্চিম মেদিনীপুরে অবস্থা আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বাঁকুড়ার নদীগুলিতেও জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। শিলাবতী, কংসাবতী তো রয়েছেই, শালি, দ্বারকেশ্বর নদীর জল বাড়ছে হু-হু করে। নদীর জল উপচে গ্রামে ঢুকে প্লাবিত করেছে এলাকার পর এলাকা। কোতলপুরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার উপর দিয়ে বইছে নদীর জল। চাষের জমি সমস্ত জলমগ্ন। দক্ষিণ বাঁকুড়াতেও শিলাবতী নদীর থাবা। বাস যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সিমলাপাল ও ইঁটাপড়া সেতু জলের তলায় চলে যেতে পারে।
বীরভূমের লাভপুরের বেশ কিছু গ্রামে ঢুকেছে কুয়ে নদীর জল। বেশ কয়েকটি জায়গায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রাম। রাস্তা চলে গিয়েছে জলের তলায়। সিউড়ির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে লাভপুরের। জেলাশাসক লাভপুরের প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে যান। তিনি রিপোর্ট পাঠিয়েছেন সেচমন্ত্রীকে। মুর্শিদাবাদের পাঁচটি গ্রামও জলের তলায় চলে গিয়েছে। কুয়ে নদীর জল ঢুকে তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। বড়ঞা ও বৈদ্যনাথপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ।
এদিকে প্রবল বৃষ্টির জেরে দিঘায় সমুদ্রে জলচ্ছ্বাস শুরু হয়েছে। সমুদ্র ও নদী তীরবর্তী এলাকায় সতর্কতা জারি করেছে জেলা। দিঘা সৈকতে মাইকিং করা হচ্ছে। সমুদ্রের কাছাকাছি যেতে নিষেধ করা হয়েছে পর্যটকদের। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে সমস্ত ফ্লাড সেন্টারে সর্বক্ষণের জন্য সরকারি কর্মীদের মজুত রাখা হয়েছে।