সিরিয়ালের নেশাই কাল হল, ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে আত্মঘাতী দিদি
কখনও দিদি যখন সিরিয়াল দেখলে ভাই রিমোর্ট নিয়ে ঘুরিয়ে দেয় কার্টুনের চ্যানেল। আবার ভাই কার্টুন দেখলে দিদি ঘুরিয়ে দেয় সিরিয়ালের চ্যানেল। তা নিয়েই দু’ভাই-বোনের ঝগড়া এবং মর্মান্তিক পরিণতি।
দিদির নেশা সিরিয়াল। আর ছোট্ট ভাই দেখতে চায় কার্টুন। কখনও দিদি যখন সিরিয়াল দেখলে ভাই রিমোর্ট নিয়ে ঘুরিয়ে দেয় কার্টুনের চ্যানেল। আবার ভাই কার্টুন দেখলে দিদি ঘুরিয়ে দেয় সিরিয়ালের চ্যানেল। তা নিয়ে প্রায়ই দু'ভাই-বোনের ঝগড়া লেগে থাকত। বৃহস্পতিবার তা যে মর্মান্তিক রূপ নেবে কেই-বা ভেবেছিল। টিভি কেনাই কাল হয়ে দেখা দিল জামালের অভাবের সংসারে।
জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির ঘটনা। নেহাতাই সাদামাটা একটা পরিবার। বোরাবাড়ি গ্রামে দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে এক চিলতে ঘরে বাস জামাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রীর। চাষের কাজ করেই কোনওরকমে দিন গুজরান করেন তিনি। টিভি দেখা নিয়ে সেই পরিবারেই যে এমন ঘটনা ঘটে যাবে ভাবতে পারেননি অভাবী দম্পতি।
ভাই-বোনের মারামারিতে মা-বাবা একটু বেশিই বকেছিল বছর পাঁচেকের বড় দিদিকে। সেই অভিমানেই কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করল নবম শ্রেণির ছাত্রী জামিনা। দু'দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে। এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ ধূপগুড়ির গ্রাম।
দিদি যে এমন কাজ করে বসবে ভাবতে পারেনি বছর দশেকের রুবেলও। ওইদিন রুবেল কার্টুন দেখছিল। জামিনা স্কুল থেকে ফিরে রিমোট নিয়ে সিরিয়ালের চ্যানেলে ঘুরিয়ে দেয়। ব্যাস, ভাই-বোনে ঝগড়া, মারামারি। মা-বাবা জামিনাকে বকাঝকা করে চাষের কাজ করতে চলে গিয়েছিল। মা-বাবা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেই অভিমানে কীটনাশক খেয়ে নেয় কিশোরী জামিনা।
দিদিকে মেঝেতে ঢলে পড়তে দেখেই কাঁদতে কাঁদতে মা-বাবাকে ডাকতে যায় রুবেল। জামিনাকে ভর্তি করা হয় ধূপগুড়ি হাসপাতালে। তারপর জামিনার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে স্থানান্তরিত করা হয় জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে। সেখানেও শেষরক্ষা হয়নি। শুক্রবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর। দিদির নিথর দেহ জড়িয়ে সমানে কেঁদে চলেছে রুবেল। একটা কথাই বলে চলেছে সে- মা, দিদিকে কথা বলতে বল না। আমি আর কার্টুন দেখব না। ছেলের কথা শুনে ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠেন সন্তানহারা মা-বাবাও।