ডানা ছাঁটার কাজ শেষ, তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকেও অপসারিত হলেন মুকুল রায়
কলকাতা, ২৮ ফেব্রুয়ারি : সংসদীয় দলের চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ, রাজ্যসভার দলনেতার পদ থেকে সরিয়েও শেষ হল না, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদ থেকেও অপসারণ করা হল মুকুল রায়কে। শনিবার দুপুরে ওয়ার্কিং কনমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সরকারি ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মুকুল রায়ের জায়গায় দলের নতুন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করা হচ্ছে সুব্রত বক্সিকে।
এদিন ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ২১ জনের যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে তাতেও রাখা হয়নি মুকুল রায়কে। অর্থাৎ ওয়ার্কিং কমিটি থেকেও বাদ দেওয়া হল মুকুল রায়কে। সূত্রের খবর, নয়া সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মুকুল দলে সময় দিচ্ছে না, বৈঠকে আসছে না, একা একা নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছে। তাই পদক্ষেপ নেওয়াটা প্রয়োজন। এই নতুন ওয়ার্কিং কমিটিই মূল। এর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই কাজ করতে হবে।
এদিকে দল থেকে বহিষ্কার না করে দলের রেখে এভাবে মুকুল রায়কে অপ্রাসঙ্গিক করে কী বার্তা দিতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, মুকুলকে দল থেকে বহিষ্কার করার সাহস মমতার নেই। তাই বারবার অপদস্ত করে মুকুলকে চাপ দিতে চাইছে।
যদিও তৃণমূলের দলীয় সূত্রের খবর, ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক আছে বলে চিঠি দেওয়া হয়েছিল মুকুল রায়কেও। কিন্তু উনি দিল্লিতে বসে রয়েছেন। সংসদে বাজেট এবং ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে চিঠিতে তিনি জানান তিনি বৈঠকে আসতে পারবেন না। তাতেই নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ হয়।
এপ্রসঙ্গে দিল্লিতে মুকুল রায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, দলের সিদ্ধান্ত দল নিয়েছে। সে সিদ্ধান্ত সঠিক না বেঠিক তা সময়ই বলবে। এই মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেস দলের একজন সাংসদ ছাড়া আমার আর কোনও ভিন্ন পদ নেই। এটাই বর্তমান।
ডানা ছাঁটার কাজ শেষ, রাজ্যসভার দলনেতার পদ থেকেও সরানো হল মুকুল রায়কে
কলকাতা, ২৮ ফেব্রুয়ারি : সংসদীয় দলের চেয়ারম্যান পদ থেকে গতকালই অপসারিত করা হয়েছিল তাঁকে। এবার তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল মুকুল রায়কে। এবিষয়ে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আনসারিকে চিঠি পাঠিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পিটিআই সূত্রের খবর সেই চিঠি গ্রহণ করেছে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান দফতর। আর এরই সঙ্গে দলে মুকুলের ডানা ছাঁটার কাজ সম্পূর্ণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন : সংসদীয় দলের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারিত, মুকুল প্রায় ঝরেই গেল তৃণমূলের
মুকুল রায়ের বদলে রাজ্যসভার নয়া দলনেতা হতে চলেছেন ডেরেক ওব্রায়েন। ডেরেক রাজ্যসভার মুখ্য সচেকত ছিলেন। ডেরেক দলনেতা হওয়ায় সেই জায়গায় রাজ্যসভায় দলের মুখ্যসচেতক করা হতে পারে সুখেন্দু শেখর রায়কে।
একসময় দলের দ্বিতীয় ছিলেন মুকুল রায়। মমতা ঘণিষ্ঠ তো বটেই। সারদা কাণ্ডে তৃণমূলের নাম জড়ানোর পরও মুকুলের পক্ষে বহুবার সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মুকুলের প্রশংসা করে কখও ক্লান্ত হতেন না যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী এমন হল যার জন্য এত দুরত্ব তৈরি হল? শুধু দুরত্বই নয়, মুকুল রায়কে দলের মধ্যে অপদস্থ করার একটা সুযোগও ছাড়ছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? এপ্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান।
অন্যদিকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে শুভেন্দুকে সরিয়ে নিজের ভাইপো অভিষেককে যুব সমাজের মুখ করে তোলার যে প্রচেষ্টা শুরু করেছিলেম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেখান থেকেই দুরত্ব বাড়তে শুরু করে তৃণমূলের প্রথম ও দ্বিতীয়র মধ্যে। গতকাল একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে মুকুল রায় নিজে বলেন, শুভেন্দুকে সরানোটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু এতদিন পরে হঠাৎ প্রকাশ্যে দলের সিদ্ধান্তকে ভুল বলে কী বার্তা দিতে চাইছিলেম মুকুল তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে।
এদিকে আবার দলীয় সূত্রের একাংশের মতে মুকুল রায় নিজেকে সর্বশক্তিমান ভাবতে শুরু করেছিলেন। তার কথাই সংগঠনের শেষ কথা বলে মনে করতে শুরু করেছিলেন। দলের কয়েকজনকে নিয়ে দলবাজি করারও চেষ্টা করেছিলেন। সেটা মেনে নিতে পারেননি দলনেত্রী। আর সেই কারণেই তার ক্ষমতা খর্ব করে তাকে শিক্ষা দেওয়াই দলনেত্রীর একমাত্র উদ্দেশ্য।