বিদেশে বসে দেশবাসীকে ‘থ্রেট’ করছেন প্রধানমন্ত্রী, বিজেপি-র আমলে দেশ নিরাপদ নয়, বললেন মমতা
বিদেশে বসে দেশের লোককে ‘থ্রেট' করছেন, এ কেমন প্রধানমন্ত্রী। পুরো দেশটাকে রসাতলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। মোদীকে আক্রমণ করে বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
হাওড়া, ১২ নভেম্বর : বিদেশে বসে দেশের লোককে 'থ্রেট' করছেন, এ কেমন প্রধানমন্ত্রী। পুরো দেশটাকে রসাতলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। দেশের মানুষ আর এই সরকারের অধীনে নিরাপদ নয়। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কেন্দ্রের মোদী সরকারকে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি সরকারকে ঝুটা সরকার, কালা সরকার বলতেও দ্বিধা করলেন না বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
দেশকে অর্থনৈতিক অস্থিরাবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জাপান সফরে যাওয়ার তীব্র সমালোচনা করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার নবান্নে এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, নোট বাতিলের নামে দেশের মানুষের সঙ্গে জালিয়াতি করেছে বিজেপি সরকার। এখন শুনছি রুলিং পার্টি সব জানত। ব্ল্যাক মানি উদ্ধারের জন্য নাকি রাতারাতি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মমতা প্রশ্ন তোলেন, কত মানুষের কাছে কালো টাকা রয়েছে? মাত্র এক শতাংশ। সেজন্য ৯৯ শতাংশ মানুষকে ভাসিয়ে দিলেন!
তিনি বলেন, 'বিজেপি সরকারের 'ব্ল্যাক ডিসিশন' এটি। প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গিয়ে জ্ঞানের বাণী বিলোচ্ছেন আর দেশে অর্থমন্ত্রী বলছেন, সংযত হন, ধৈর্য ধরুন। অর্থমন্ত্রী নিজেকে সংযত করতে পেরেছেন। পূর্বতন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরমের আমলেও নোট বাতিল হয়েছিল, তখন এত সঙ্কট হয়নি। অন্তত দু'মাস আগে নোটিশ জারি করতে হয়। তা না করে কোনও পরিকল্পনা নেই, পরিকাঠামো নই দুম করে নোট বাতিল ঘোষণা করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর এমন নোট তৈরি করা হয়েছে যে, তা আবার এটিএম মেশিনে ঢুকছে না। আবার নতুন মেশিন তৈরি করতে হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে এক হওয়ার ডাক দেন। তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে দেশের মানুষ আর নিরাপদ নয়। এরা দেশ চালানোর যোগ্য নয়। এদের বিরুদ্ধে এক হতে হবে। এরা মানুষের কথা ভাবে না। স্বৈরতন্ত্র চালাচ্ছে এই সরকার। নিত্য হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে মানুষকে।
তাঁদের সঙ্কট থেকে উদ্ধার করার কোনও পরিকল্পনাই নেই। উল্টে জ্ঞানের বুলি আওড়াচ্ছেন। সাধারণ মানুষকে নাকল হতে হলে আমি সবার আগে প্রতিবাদ করব। শুধু আমি নই, মায়বতীজি, কংগ্রেসও এই নোট বাতিল ইস্যুতে মানুষের হয়রানির ঘটনায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তাদের ধন্যবাদ। আমি বাজারে ঘুরে দেখেছি, চাল নেই, ডাল নেই, হাহাকার চলছে। সাধারণ মানুষের হাতে একটা টাকা নেই। খাদ্য সঙ্কট তৈরি হয়েছে অনেক পরিবারে।
দু'হাজার টাকা করে দিচ্ছে ব্যাঙ্ক, সেই টাকার খুচরো মিলবে কী করে! এখনও ৫০০ টাকা বাজারে আনতে পারল না কেন্দ্র। শিশুর ওষুধ কিনতে পারছে না, কত বিয়ে বাতিল হয়ে গিয়েছে মোদি সরকারের এই তুঘলকি সিদ্ধান্তের জেরে। মমতার আরও অভিযোগ. সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়েও ভুল বুজিয়েছিলেন মোদি, তার জেরে বলিদান দিতে হয়েছে অনেক প্রাণ, এবার অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা জারি হল মিথ্যা ব্ল্যাক মানি ধরার আশ্বাসে। এখন পর্যন্ত কত টাকা উদ্ধার করতে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আমি নই, অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, এইভাবে কোনও কালো টাকা উদ্ধার করা যাবে না। মমতা বলেন, উল্টে কালোবাজারিদের সুবিধা করে দেওয়া হল। এই সুযোগে দেশজুড়ে কালোবাজারি চলছে। এদিন নবান্নে আসার আগে সারপ্রাইজ ভিজিট-এ চৌরঙ্গি-র বিভিন্ন ব্যাঙ্কে পরিদর্শনে যান মমতা। গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের অভাব-অভিযোগের কথা মন দিয়ে শোনেন।
ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের জিজ্ঞাসা করেন, আপনাদের হাতে কি শুধুই দু'হাজার টাকা রয়েছে! তবে সাধারণ মানুষ খুচরো পাবেন কোথায়। ব্যাঙ্ককর্মীরা তাঁদের অসহায়তার কথা ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রীর সকাশে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, প্রস্তূতি-পরিকল্পনা ছাড়াই এসব করা হয়েছে, তাই মানুষকে আজ মাশুল গুনতে হচ্ছে। এ তো খুন করল একজন, আর তার শাস্তি পাচ্ছে আর একজন! মানুষের এই হয়রানি তিনি মুখ বুজে সহ্য করবেন না, জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।