জলের মধ্যেই বোটে ছুটছে মেডিক্যাল ক্যাম্প, বন্যা বিধ্বস্ত হরিশ্চন্দ্রপুরে এক অসাধারণ ছবি
জলবন্দি হয়ে রয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরের দু'টি ব্লকে একাধিক গ্রাম। এই পরিস্থিতিতে আটকে পড়া বন্যা দুর্গতদের সাহায্যে বোটে করে মোবাইল মেডিক্যাল ক্যাম্প চালু করেছে হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতাল।
চারিদিকে যেদিকে চোখ যায় শুধুই জল। জনপদের ঠিকানা চোখে পড়াটা দুরস্ত। ১৯৯৮ সালের শেষবার বন্যা দেখেছিল হরিশ্চন্দ্রপুরের মানুষ। কিন্তু, এবারের বন্যা সেবারের ভয়াবহতাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। বন্যার জলে অনেকেই বেরিয়ে আসতে পারেননি। কেউ জলবন্দি হয়ে থেকে গিয়েছেন ভিটে-মাটিতে। কেউ আবার ভিটেমাটি জলে ভেসে যাওয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন উচু স্থানে। কিন্তু, এলাকার মূল ভূখণ্ড হরিশ্চন্দ্রপুরে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ এঁদের কাছে। কারণ, জল ডিঙিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুরে পৌঁছনোর কোনও ব্যবস্থাই তাঁদের কাছে নেই। ফলে, জলবন্দি অবস্থায় কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বিপদে পড়তে হচ্ছে। বন্যা যখন চরমে সে সময় সাপে কাটা এক ব্যক্তিকে দীর্ঘসময় বাড়ির ছাদে ফেলে রাখতে হয়েছিল। কারণ জল পেরিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। এমনকী এক প্রসূতিরও জলবন্দি অবস্থায় মৃত্যুর খবর মিলেছিল দিন কয়েক আগে।
[আরও পড়ুন:দাদু-দিদাকে অনুসরণ করে বন্যার জলে, হরিশ্চন্দ্রপুরে তলিয়ে গেল শিশু ]
বন্যা বিধ্বস্ত এই পরিস্থিতিতে তাই দুর্গতদের জন্য এক অভিনব পন্থা নিয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতাল। বন্যায় আর্তদের সেবার জন্য চালু করা হয়েছে মোবাইল মেডিক্যাল ক্যাম্প। একটি বোটে করে এই ক্যাম্প পৌঁছে যাচ্ছে বন্যা বিধ্বস্ত জলবন্দি এলাকায়। বোটে করেই যাচ্ছেন চিকিৎসক থেকে শুরু করে অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা। নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওষুধ-পত্র। দুর্গতদের শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় ওষুধ। এমনকী, কাউকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন হলে তাঁকে বোটে করেই নিয়ে আসা হচ্ছে হরিশ্চন্দ্রপুরে।
এছাড়াও, হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লকের যেসব স্থান সেভাবে বানভাসি হয়নি সেখানেও খোলা হয়েছে স্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প। যার নেতৃত্বে রয়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালের বিএমওএইচ ছোটন মণ্ডল। এছাড়াও অন্য মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলির তত্বাবধানে রয়েছেন, চিকিৎসক শুভেন্দু ভক্ত, তাপস মজুমদার, পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, সুধাংশু সাহা। এই মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলি থেকে সাপে কাটা থেকে সুরু করে বিভিন্ন জলবাহিত রোগ সম্পর্কেও বন্যা দুর্গতদের সচেতন করা হচ্ছে। জলবাহিত রোগ প্রতিরোধে দেওয়া হচ্ছে ওষুধ।
মঙ্গলবার বোটে করে মোবাইল মেডিক্যাল ক্যাম্প নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা রামপুর, ইসলামপুর, ভাট্টা, কাউয়ামারী, তেঁতুলবাড়ি, গড়গড়ি এলাকায় যান। সেখানে দুর্গতদের সঙ্গে কথাও বলেন তাঁরা। বিলি করা ওষুধপত্র।