অবিশ্বাস্য : বুকের এফোঁড়-ওফোঁড় বাঁশ ঢুকেও প্রাণে রক্ষা পেলেন দিঘার বাসচালক!
কলকাতা, ১৫ সেপ্টেম্বর : কথায় আছে, 'রাখে হরি মারে কে'! তবে কথাটা যদি ঘুরিয়ে বলা হয় যে এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা যখন রয়েছেন, তখন যেতে বসা প্রাণও আপনার ফিরে আসতে পারে। কতকটা তেমনই ঘটেছে মেদিনীপুরের বাসিন্দা পেশায় বাসচালক লক্ষ্মীকান্ত ভুঁইয়ার সঙ্গে। [রাস্তার মাঝেই কেউ ফেলে গিয়েছে 'তাজা হৃৎপিণ্ড', কী করবে বুঝে পারছে না পুলিশও!]
বাস চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় বাঁশের টুকরো একেবারে বুকের এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়েছিল লক্ষ্মীবাবুকে। তিনি বাঁচবেন, এমন আশা বাড়ির লোকেরাও করেননি। এহেন লক্ষ্মীবাবুকেই বাঁচিয়ে ফিরিয়েছেন এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা। আপাতত তিনি অনেকটা সুস্থ রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। [৪০টি ছুরি আস্ত গিলে খেয়েও দিব্যি সুস্থভাবেই বেঁচে রয়েছেন এই ব্যক্তি!]
আসলে ঘটনা হল, দিঘা-নন্দকুমার রুটে বাস চালান লক্ষ্মীকান্তবাবু। বুধবারও বাস নিয়ে বেরিয়েছিলেন। সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ ওই রুটে ভেঁড়িয়ার কাছে বাস আসতেই একটি বাঁশ বোঝাই লরির পিছনে গিয়ে ঝাক্কা মারে বাসটি। চালকের আসনে বসা লক্ষ্মীবাবু কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাস উল্টে যায় এবং বাঁশের বড় একটি টুকরো এসে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয় তাঁর বুক। [জানুন দেশের সবচেয়ে বিস্ময়কর কয়েকটি 'মেডিক্যাল কেস' সম্পর্কে]
একটি বাঁশের টুকরো সোজা সামনে থেকে এসে ঢুকে বেরিয়ে যায় পিঠ দিয়ে। অল্পের জন্য হৃদপিণ্ডটি কোনওমতে রক্ষা পায়। বুকে বাঁশ দেওয়া অবস্থাতেই এরপরে লক্ষ্মীবাবুকে নিয়ে আসা হয় স্থানীয় এক হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে নিয়ে আসা হয় তমলুক হাসপাতালে। [এই 'বিস্ময়-শিশুদের' দেখলেই চমকে উঠবেন!]
সবকিছু বিচার করে উপায় না দেখে লক্ষ্মীবাবুকে তৎক্ষণাৎ রেফার কার হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। রাত ১০ টায় তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসা হয়।
এরপরই প্রকাশ সানকির নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল তৎপর হয়ে ওঠে। প্রায় তিন ঘণ্টা সফল অস্ত্রোপচারের পরে বিপন্মুক্ত করা হয় লক্ষ্মীকান্ত ভুঁইয়াকে।
কিন্তু কীভাবে করা সম্ভব হল এত জটিল অপারেশন? কীভাবেই বা লক্ষ্মীবাবুকে প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারলেন চিকিৎসকেরা। এই বিষয়ে চিকিৎসক প্রকাশ সানকি জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার অবশ্যই অত্যন্ত জটিল ছিল।
তাঁর কথায়, যেহেতু বুকের দুদিকে বাঁশের টুকরো আটকে ছিল ফলে লক্ষ্মীবাবুকে অজ্ঞান করে অস্ত্রোপচার করা যায়নি। বদলে বুকের কাছে 'লোকাল অ্যানাস্থেশিয়া' নিয়ে জায়গাটি অবশ করে বাঁশের টুকরো বের করতে হয়েছে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অসুবিধা ছিল, লক্ষ্মীবাবুর কৃত্তিম শ্বাসনালী তৈরি করে অস্ত্রোপচারের পথ প্রশস্ত করা। সেই উপায় অবলম্বন করে, ঘাড়ের কাছে কৃত্তিম শ্বাসনালী বসিয়ে তারপরে এই জটিল অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। আপাতত অনেকটাই বিপন্মুক্ত রয়েছেন মেদিনীপুরের এই বাসচালক। আর পরিবারও কাছের মানুষকে ফিরে পেয়ে ধন্যবাদ জানাচ্ছে ভগবানরূপী 'ডাক্তারবাবু'-দের।