৭০০ থেকে বেড়ে ১ লক্ষ ২৭! ভাবতেই পারেননি মন্তেশ্বরের তৃণমূল প্রার্থী
লক্ষ্য ছিল জয়ের ব্যবধান সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে যাওয়া। এবার বর্ধমানের এই গ্রামীন কেন্দ্রে তেরঙ্গা জোড়া ফুলের নিশান উড়িয়ে জয়ের ব্যবধান ৭০০ থেকে বাড়িয়ে ১ লক্ষ ২৭ হাজার ১২৭-এ নিয়ে গেলেন তৃণমূল প্রার্থী
মন্তেশ্বর, ২২ নভেম্বর : গত বিধানসভা কোনওমতে কান ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। এবার লক্ষ্য ছিল জয়ের ব্যবধান সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে যাওয়া। বর্ধমানের এই গ্রামীন কেন্দ্রে তেরঙ্গা জোড়া ফুলের নিশান উড়িয়ে জয়ের ব্যবধান ৭০০ থেকে বাড়িয়ে ১ লক্ষ ২৭ হাজার ১২৭-এ নিয়ে গেলেন তৃণমূল প্রার্থী সৈকত পাঁজা। ফলে গ্রামীণ বর্ধমানে সুদিন আসার অপেক্ষা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে গেল সিপিএমের।
এমন যে ঘটতে চলেছে আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল সিপিএম। সেই কারণেই বাম এজেন্ট বয়কট করেছিলেন ভোট গণনা। একদা লাল দুর্গে এবার ঘটে গেল সবুজের অভিযান। ২০১১-য় রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলেও মন্তেশ্বর ধরে রেখেছিল সিপিএম। ২০১৬ বিধানসভায় মাত্র ৭০০ ভোটে জোটপ্রার্থীকে হারিয়ে তৃণমূলকে জয় এনে দিয়েছিলেন সজল পাঁজা। তাঁর প্রয়াণে এই আসনে উপনির্বাচন। সেখানে বিপুল জয় পেলেন প্রয়াত বিধায়ক-পুত্র সৈকত পাঁজা।
যত বেলা গড়িয়েছে তৃণমূল প্রার্থীয় জয়ের পথই সুনিশ্চিত হয়েছে। বরং সিপিএম প্রার্থী গনি সরকারের সঙ্গে বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিত পোদ্দারের লড়াই জমে উঠেছিল বেশ। সেই লড়াই দ্বিতীয় হওয়ার। কংগ্রেসের বুলবুল আহমেদ শেখ আগেই রণেভঙ্গ দিয়েছিলেন। এই কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানের লড়াইয়ে প্রথমে বিজেপি এগিয়ে থাকলেও, পরে সিপিএম প্রার্থী গনি সরকারই দ্বিতীয় হন। বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিৎ পোদ্দার তৃতীয় স্থান দখল করেন।
কিন্তু কেন হঠাৎ কের বেড়ে গেল এই জয়ের ব্যবধান? বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, বিধানসভা ভোটে গোটা রাজ্যে বিপুল জয়ের পরও যে আসনগুলিতে দলীয় প্রার্থীরা হেরেছেন বা জয়ের ব্যবধান খুব কম, সেই আসনগুলির ওপর বাড়তি নজর দিয়েছিল তৃণমূল। মন্তেশ্বরে গতবার জয়ের মার্জিন মাত্র ৭০০ থাকায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।
উপ-নির্বাচনে তৃণমূলের প্রধান ইস্যু ছিল উন্নয়ন। প্রয়াত বিধায়কের অসমাপ্ত কাজ তাঁর ছেলের মাধ্যমেই শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তৃণমূল। তার উপর যুক্ত হয়েছিল নোট বাতিলে মানুষের দুর্ভোগ। তাতেই জয়ের মার্জিন ৭০০ থেকে বেড়ে হয়ে গেল ১ লক্ষ ২৭।
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, গত বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেসের জোট ছিল। এ বার জোট না থাকায় তৃণমূল বাড়তি সুবিধা পায়। প্রচার-পর্বে সৈকত এলাকা চষে ফেলেন। ভোটারদের দরজায় দরজায় ঘোরেন। ভোট চাইতে পৌঁছে যান নোটের লাইনে। আর তার ফল হাতেনাতে পান তৃণমূল প্রার্থী সৈকত পাঁজা।
তিনি বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে সুযোগ দিয়েছেন মানুষের জন্য কাজ করার। বাবার অপূর্ণ কাজ শেষ করাই আমার প্রাথমিক লক্ষ্য। মানুষের জন্য কাজ করতে চাই আগামী দিনে। জিতব জানতাম, কিন্তু জয়ের ব্যবধান যে বেড়ে লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে, তা ভাবিনি। মানুষ আশীর্বাদ দিয়েছেন, তাই দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মন্ত্রী স্বপন দেবনা বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানেই অগ্রগতি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানেই উন্নয়ন। গ্রামীণ বর্ধমানের মানুষ সেটা উপলব্ধি করেছেন। তাই মানুষ দু'হাত তুলে আশীর্বাদ দিয়েছেন আমাদের দলের তরুণ প্রার্থী সৈকত পাঁজাকে। অল্পদিন বিধায়ক থাকলেও সজলবাবু, মানুষের মধ্যে এই বীজ ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথেই একমাত্র উন্নয়ন সম্ভব। এবার বাবার সেই চিন্তাভাবনার প্রকাশ ঘটাবেন সৈকত।