মন্দারমনি হয়ে উঠছে সাক্ষাৎ মৃত্যু-সৈকত, বেলেল্লাপনা কাড়ছে জীবন, হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের
মন্দারমনি, ১৯ সেপ্টেম্বর : ঠেকেও শিক্ষা নেয়নি মন্দারমনি। একটার পর একটা দুর্ঘটনার পরও খোলনোলচে বদলায়নি। এখনও সমানে চলছে সমুদ্র সৈকতে দেদার যানবাহন। সমানে মন্দারমনির সমুদ্রে উদ্দাম জীবন পর্যটকদের। প্রচুর মদ আর বেলেল্লাপনা চলছে অবাধেই। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাতেও হুঁশ নেই উন্মত্ত পর্যটকদের। তারই জেরে মন্দারমনির সমুদ্র সৈকত হয়ে উঠছে সাক্ষাৎ মৃত্যুপুরী।
কিছুদিন আগেই সমুদ্র সৈকতে বন্ধুদের মধ্যে গাড়ির রেষারেষি প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল তিন বন্ধুর। জখম হয়েছিলেন একজন। তারপর একমাস কাটতে না কাটতেই ফের মন্দারমনির সমুদ্র কেড়ে নিল তিনজনের জীবন। এর জন্য দায়ী কে? নিশ্চিতভাবেই পর্যটকদের উদ্দান জীবনযাত্রাই সর্বাগ্রে দায়ী। দায় রয়ে যায় প্রশাসনেরও।
প্রথমত অবাধে মদ বিক্রি চলে। মদ ছাড়া সমুদ্র-স্নানে অনীহা একাংশ পর্যটকের। প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নেয় না। যখন দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তারপরই শুরু হয় তৎপরতা। তাও কিছুদিন। উত্তেজনা কমে গেলেই প্রশাসনও চুপ।
দ্বিতীয়ত, সমুদ্র উত্তাল জেনেও, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অবলীলায় পর্যটকরা নেমে পড়েন সমুদ্রে। মদের নেশায় ভয়ডর হাওয়া। তারপরই ফুঁসে ওঠা সমুদ্রে প্রাণ বিসর্জন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এতকিছুর পরও কেনও প্রশাসন আরও কঠোর হবে না? কেন বেয়াড়া পর্যটকদের শায়েস্তা করা হবে না? দায় কি এড়াতে পারে প্রশাসন।
তৃতীয়ত, এখনও সমুদ্র সৈকতে অবাধে গাড়ির রেষ চলছে। প্রশাসন সেই জেগে ঘুমোচ্ছে। প্রশাসনিক কর্তাদের সাফাই, এখনও সম্পূর্ণ রাস্তা তৈরি হয়নি মন্দারমনির হোটেলে যাওয়ার। অন্তত দশটি হোটেলে যেতে গেলে সী-বিচের উপর দিয়েই যেতে হবে। অন্তত এক কিলোমিটার সী-বিচ অতিক্রম করতেই হবে পর্যটকদের। প্রশাসেনর তরফে জানানো হয়েছে, জমি জটে আটকে আছে রাস্তা তৈরির কাজ। ওই রাস্তা হয়ে গেলে মন্দারমনি সৈকতে পুরোপুরি যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
শনিবার
সমুদ্রে
ডুবে
তিন
পর্যটকের
মৃত্যু
হয়।
তার
জেরে
মন্দারমনিতে
পুলিশি
তৎপরতা
এখন
তুঙ্গে।
সৈকত
লাগোয়া
স্টলগুলিতে
আবগারি
দফতরের
অভিযানে
উদ্ধার
হয়েছে
প্রচুর
মদ।
মদ
খেয়ে
সৈকতে
পর্যটকদের
তাণ্ডব
রুখতে
চলছে
কড়া
নজরদারি।
ওইদিন
মেঘলা
আবহাওয়ায়
সমুদ্র
ছিল
উত্তাল।
জলে
নামতে
নিষেধ
করেছিলেন
সৈকতে
থাকা
পুলিশকর্মীরা।
কিন্তু সেকথা কানেই তোলেননি কলকাতা থেকে যাওয়া আট তথ্য-প্রযুক্তি কর্মীর দলটি। জলে নেমে পড়েন তাঁরা। শুরুতেই তলিয়ে যান সল্টলেকের লোকেশ মেহরোত্রা ও তেঘরিয়ার বিনয় চৌধুরী। বড় ঢেউয়ের ধাক্কায় পাথরের ওপর আছড়ে পড়েন নিউটাউনের বাসিন্দা সুমন্ত্র বন্দ্যোপাধ্যায়। মাথায় আঘাত লেগে মৃত্যু হয় তাঁর। শনিবারই তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। রবিবার উদ্ধার হয় লোকেশ মেরহোত্রা এবং বিনয় চৌধুরীর দেহ। অভিযোগ, মদ খেয়ে বেসামাল অবস্থায় সমুদ্রে নামেন তাঁরা। তার জেরেই বিপত্তি।
শনিবার রাত থেকেই মন্দারমনির বিচে ছিল কড়া নজরদারি। ওয়াচ টাওয়ার থেকে পুলিশ কিয়স্ক- রাতভর পুলিশ মোতায়েন থেকেও কেন আটকানো গেল না দুর্ঘটনা, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে পড়েছে। দফায় দফায় মাইকিং সত্ত্বেও পর্যটকদের বেয়াড়া মনোভাবও এই মৃত্যুর জন্য দায়ী।
রবিবার থেকে আবগারি দফতর বাড়তি সতর্ক। সি-বিচের স্টল থেকে, ঝোপের আড়াল থেকে উদ্ধার হয়েছে দেশি-বিদেশি মদ। সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ভিড়ে মিশে থাকছেন সাদা পোশাকের পুলিশকর্মীরা। সন্দেহ হলেই পর্যটকদের আটকাচ্ছেন তাঁরা। মদ্যপ, বেসামাল পর্যটকদের জন্য বার বার শিরোনামে উঠে এসেছে মন্দারমনি। এবার রাশ টানতে বদ্ধপরিকর প্রশাসন।