ডেস্টিনেশন গোয়ালতোড়, মমতার বার্তায় জোর তৎপরতা
গোয়ালতোড়, ১৫ সেপ্টেম্বর : মমতা-ভাষ্যে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠল গোয়ালতোড়। পাঁচ দশক পর ফের শিল্প সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেল পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই জোর তৎপরতা। সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি ফেরানোর মঞ্চে দাঁড়িয়ে রাজ্যে শিল্প স্থাপনে টাটাদের ফের আহ্বান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এক হাজার একর জমি দেব, রাজ্যে বিনিয়োগ করুন। ভাবার জন্য এক মাস সময়ও দিয়েছেন। কিন্তু একমাস থেমে থাকার ধৈর্য্য নেই গোয়ালতোড়ের।
সিঙ্গুরে গোয়ালতোড়ের নাম ঘোষণা হতেই বৃহস্পতিবার থেকে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে প্রস্তাবিত এলাকা সাফাইয়ের কাজে নেমে পড়েছেন কর্মীরা। একশো দিনের কাজের আওতায় গোয়ালতোড়ের প্রকল্প এলাকা সাফাই করার পরিকল্পনা নেওয়া। এতদিন পর গোয়ালতোড় লাইমলাইটে আসায় এলাকাবাসীর মধ্যেও উন্মাদনা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। ইতিমধ্যেই মেদিনপুর থেকে গোয়ালতোড় পর্যন্ত রাস্তা ছয় লেনে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পুরো প্রকল্প এলাকাটি প্রাচীর দেওয়ার পরিকল্পনাও গৃহীত হয়েছে। হয়ে গিয়েছে টেন্ডার।
এই কাজে প্রায় ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বর্তমানে ৮৩০ একর জায়গা রয়েছে এই অংশে। তার মধ্যেই কংসাবতী থেকে ওয়াটার রিজার্ভার করার পরিকল্পনাও রয়েছে, রয়েছে বিদ্যুতের সাবস্টেশন গড়ার চিন্তা-ভাবনাও। একটা শিল্প গড়ার আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে দিতে রাজ্য সরকার তৎপর। রাজ্যের ক্ষমতায় তৃণমূল কংগ্রেস আসার পরই একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ল্যান্ডব্যাঙ্ক করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। শুধু পরিকল্পনা নিয়েই থেমে থাকেননি তিনি। পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়, বর্ধমানের পানাগড় ও হাওড়ার ধূলাগড় থেকে উলুবেড়িয়ার বহু ল্যান্ড ব্যাঙ্কিং করা সম্ভব হয়েছে ইতিমধ্যে। যার ফলে জোর দিয়ে তিনি টাটা, বিএমডব্লু-কে বিনিয়োগের আহ্বান জানাতে পেরেছেন।
যে গোয়ালতোড়ে টাটাদের কারখানার গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, সেই গোয়ালতোড়ে ১৯৬৪ সালে গড়ে উঠেছিল পাট বীজ গবেষণা কেন্দ্র। কিন্তু কালের খেয়ালে তা গুরুত্ব হারিয়েছে। সেই জমিই মুখ্যমন্ত্রীর ল্যান্ড ব্যাঙ্কে জায়গা পায়। দুর্গা বাঁধ ফার্ম এলাকায় রয়েছে এই ৯৩০ একর সরকারি জমি। যার বেশিরভাগটাই পতিত জমি। যদিও বর্তমানে ১০০ একর জমি কমে দাঁড়িয়েছে ৮৩০ একরে। আটের দশক থেকেই এই গবেষণাগার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তারপরই বন্ধ হয়ে যায় পাটশিল্প। ২০১৪ সালে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমকে জমি হস্তান্তর করা হয়। জমির বেশ খানিকটা অংশজুড়ে এখন ভুট্টা ও ধান চাষও করা হয়।
প্রায় এক বিঘা জমিজুড়ে এখনও রয়েছে বীজ গবেষণা কেন্দ্রের বন্ধ হয়ে যাওয়া অফিস। মেন রোড থেকে এই জমির দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার, সেটাই মস্ত বড় সমস্যা। পরিকল্পনা ছিল, জমিটিতে প্রাচীর দেওয়ার এবং গড়বেতা স্টেশন ও চন্দ্রকোণার মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা। কোরিয়া এবং তাইওয়ান থেকে দুই শিলপ্পতি জমিটি দেখেও গেছেন। কিন্তু কলকাতা থেকে অনেকটা দূরে হওয়ায় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় তাঁরা পিছিয়ে যান। তবে সেই প্রতিকূলতা দূর করতে ইতিমধ্যেই তৎপর হয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী।