রাম-রহিমকে নিয়ে রাজনীতি নয়, রাবণকে নিয়ে রাজনীতি কর, মোদী সরকারকে বার্তা মমতার
‘রাম-রহিমকে নিয়ে রাজনীতি করা যাবে না, রাবণকে নিয়ে যত ইচ্ছা রাজনীতি কর।’ সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুরের সভা থেকে মোদী সরকারকে বার্তা দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
খড়গপুর, ৩ এপ্রিল : 'রাম-রহিমকে নিয়ে রাজনীতি করা যাবে না, রাবণকে নিয়ে যত ইচ্ছা রাজনীতি কর।' সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুরের সভা থেকে কেন্দ্রের মোদী সরকারকে এই ভাষাতেই বার্তা দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার নিশানার বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। কঠোর ভাষায় তিনি বিজেপি তথা আরএসএসের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার ডাক দিলেন।
এদিন তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে ঝগড়া লাগিয়ে দিচ্ছে বিজেপি। বিজেপি হিংসার কথা বলে। দাঙ্গা করাটাই এদের অসুখ। তিনি বাংলায় সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলার ডাক দেন। কেন্দ্রের মোদী সরকারকে নিশানা করে তিনি বলেন, চিরকাল বঞ্চনা সহ্য করবে না বাংলা। এখনও বাংলা চুপচাপ আছে। সময় এলে মানুষ এর যোগ্য জবাব দেবে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, অন্ধ্রপ্রদেশকে বিশেষ প্যাকেজ দেওয়া হচ্ছে, অথচ বাংলাকে নয় কেন? বাংলা কেন চিরকাল বঞ্চিতের দলে থাকবে। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি না করলে কেন টাকা কেটে নেওয়া হবে? এই বৈষম্য কেন? মমতা বলেন, মাওবাদী এলাকায় একটা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প ছিল, তাও বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু যতই বঞ্চনা করুন, বাংলার উন্নয়ন রোখার চেষ্টা করুন। বাংলার উন্নয়নের ধারা স্তব্ধ করা যাবে না। যতই প্রতিকূলতা বাংলা ঠিক এগিয়ে যাবে।
এদিন ফের তিনি নোট বাতিলের প্রতিবাদে সরব হন। বলেন, নোটের ধাক্কায় খরিফ চাষ হয়নি। তারপর স্বনির্ভর প্রকল্পে বাঙ্কগুলি ঋণ দিচ্ছে না। কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। আমি আমার সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছি, আমার হাতে যেটুকু করার তা করছিষ কিন্তু বিজেপি যে কথা দিয়েছিল তা রাখেনি। নির্বাচনের আগে বিজেপি এখন গালভরা অনড়েক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু একটি প্রতিশ্রুতিও তারা রাখেনি। এই জেলাতেও ভুরি ভুরি অভিযোগ। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের টাকা আসেনি কেন? তার জবাবও চান মুখ্যমন্ত্রী।
এই কথা বলা পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষি জমির উপর সমস্ত খাজনা মকুব করে দেওয়া কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, 'কৃষি জমিতে খাজনা দিতে হবে না কৃষকদের। মেদিনীপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে সব জেলার কৃষকদের জন্য এই ঘোষণা করলাম। তারপরেই তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার এবার ঋণ মকুব করুক কৃষকদের। কেন্দ্রের মোদী সরকার এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, তাহলে কেন তারা কথা রাখছে না? আসলে এরা মিথ্যার উপর ভিত্তি করেই চলে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আলু চাষিরা দাম পাচ্ছেন না। আমরা আলু চাষিরা যাতে দাম পান, তার জন্য অন্যদেশে রফতানির পরিকল্পনা নিয়েছি। পেঁয়াজ চাষও বাড়িয়েছি। আগে নাসিকের উপরই শুধু ভরসা করতে হত। ইলিশ চাষও হচ্ছে।
এদিন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রশাসনিক বৈঠকের পর সরকারি জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ৮০ লক্ষ ডিম উৎপাদিত হয় বাংলায়। আরও ৮০ লক্ষ বাইরে থাকে আসে। নিশ্চিতে ডিম খান, কোনও অসুবিধা নেই ডিমে। তবে আমরা আরও তদন্ত করব। তিনি এদিন হাসেরও পোলট্রি করে দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন। সেইসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, সরকার শুধু নবান্নে বসে কাজ করে না। জেলায় জেলায় ঘুরেও কাজ করে সরকার। ব্লক স্তরে মিটিং করে কাজের পর্যালোচনা করে।
এদিন মমতা বলেন, ১১ হাজার মানুষকে সরকারি পরিষেবা তুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিষবামূলক বাকি কাজ শেষ করা হবে। আট কোটি মানুষকে দু'টাকা কেজি দরে চাল। আরও এক লক্ষ লোকশিল্পীকে সাহায্য করা হবে।