কোচবিহার থেকে বিমানে সিঙ্গাপুর! মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় তাজ্জব সবাই
বিষয়টা কী? গতকাল শিলিগুড়ির সার্কাস ময়দানে একটি সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, এ বার উত্তরবঙ্গে বিমান সংযোগ বাড়াতে চায় রাজ্য সরকার। তাই শুধু বাগডোগরা নয়, কোচবিহার থেকে বিমান চালানোর ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, নভেম্বর থেকে কোচবিহার-দুর্গাপুর রুটে বিমান চলবে। সেখান থেকে আপাতত পৌঁছনো যাবে সিঙ্গাপুর। তার পর দুর্গাপুর থেকে সরাসরি ব্যাঙ্কক ও কুয়ালালামপুর যাওয়া যাবে বলে দাবি করেন তিনি।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই। এটা আকাশকুসুম কল্পনা।
প্রথমত, পরিকাঠামো একটা ইস্যু। কোচবিহার এয়ারপোর্টে রানওয়ে রয়েছে ১০৬৯ মিটার। এই রানওয়েতে ১৮ আসনের ছোটো বিমান নামতে পারে। কারণ বড় বিমান বা এয়ারবাসের জন্য দেড় হাজারের মিটারের বেশি রানওয়ে দরকার হয়। রানওয়ে বাড়াতে রাজ্য সরকার ২৫ কোটি টাকা দেবে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দরের কর্তা শুদ্ধসত্ত্ব ভাদুড়ি বলেছেন, "রানওয়ে বাড়ানোর কাজ শেষ করে বিমান চালাতে অন্তত দু'বছর লাগবে।" বর্তমান রানওয়ের কিছু জায়গায় সংস্কার করাও দরকার। তার আগে কী করে বিমান চলবে, সেটাই আশ্চর্যের বিষয়।
"যা যাত্রী হবে তাতে জ্বালানির খরচই উঠবে না। এই রুটে বিমান চালানোর প্রশ্নই নেই"
দুর্গাপুরে রানওয়ের ওপর এখনও রয়েছে বিদ্যুতের তার। সেই তার সরাতে হবে। নইলে বিমান ওঠানামাই করতে পারবে না। কবে এই কাজ শেষ হবে, কেউ জানে না।
দ্বিতীয়ত, আর্থিক লাভ নিয়েও ভাবনাচিন্তার অবকাশ রয়েছে বৈকি! কারণ জেট এয়ারওয়েজ, ইন্ডিগো, স্পাইস জেট মায় এয়ার ইন্ডিয়া, কেউই ১০-১৮ সিটের বিমান চালায় না। বড় বিমান চালাতে গেলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক যাত্রী হওয়া দরকার। নইলে খরচ উঠবে না। কোচবিহার থেকে দুর্গাপুর মোটা টাকা খরচ করে ক'জন আসবেন? কতদিনই বা আসবেন? কারণ কোচবিহারে শিল্প নেই। আছে পর্যটন। সেই পর্যটনস্থলের টানে যে পর্যটকরা আসেন, অধিকাংশই ট্রেনে। তাতে খরচ বাঁচে। একইভাবে দুর্গাপুরে এখন শিল্পের যা অবস্থা, তাতে ঘনঘন শিল্পপতিরা যাতায়াত করবেন, এটা অতিশয়োক্তি। সুতরাং মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পরও কেউ আগ্রহ দেখায়নি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ইন্ডিগোর এক অফিসার বলেন, "আমরা অনেক আগেই সমীক্ষা করেছিলাম। তাও কোচবিহার-কলকাতা রুটে। দেখলাম, যা যাত্রী হবে তাতে জ্বালানির খরচই উঠবে না। দুর্গাপুরের অবস্থা কী হবে ভাবতে পারছেন? কোনও প্রশ্নই নেই।" কোচবিহার বিমানবন্দরের যা পরিকাঠামো, তা আন্তর্জাতিক উড়ানের পক্ষে উপযোগী নয় বলে তাঁর দাবি।
তৃতীয়ত, নামী বিমান সংস্থাগুলি যদি না আসে, তা হলে ছোটো সংস্থা তাদের ১০ সিটার বিমান চালাক, চায় রাজ্য। সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ভর্তুকি দেবে বলে জানিয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, দীর্ঘদিন ভর্তুকি দিয়ে বিমান চালানো সম্ভব নয়। রাজ্য সরকারের কোষাগারের অবস্থা যেখানে খারাপ, সেখানে এই টাকা বরং অন্যান্য উন্নয়নমূলক খাতে খরচ করা হোক।
শুধু তাই নয়। ছোটো বিমান আছে, এমন সংস্থাগুলি মূলত দিল্লি, মুম্বই ও ব্যাঙ্গালোরের। তারা সংশ্লিষ্ট শহর ছেড়ে খামোখা কেন কোচবিহার-দুর্গাপুরে বিমান চালাতে যাবে, তা নিয়ে রসিকতা শুরু হয়েছে।
নর্থ বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের প্রধান উপদেষ্টা সমরেন্দ্রপ্রসাদ বিশ্বাস বলেন, "রাজ্য সরকার তো শিল্পের পরিকাঠামোই তৈরি করল না। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ছেড়েই দিন, জাতীয় স্তরেই তুলে ধরল না উত্তরবঙ্গকে। অথচ এখানে শিল্প সম্ভাবনা প্রবল। এই অবস্থায় শুধু বিমান চালিয়ে কী হবে? কেন চাপবে লোকে? আগে বরং খানাখন্দ ঠিক করে রাস্তাগুলো চলার উপযোগী করুক সরকার।"