পাহাড়ে আগুন জ্বালিয়ে কী হাল হতে চলেছে বিমল গুরুংদের, তারই ইঙ্গিত দিলেন মমতা
আগুন নিয়ে খেলা নয়। কোনও পিকেটিং বরদাস্ত নয়। আইন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নাম না করে বিমল গুরুংদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর।
আগুন নিয়ে খেলা নয়। পাথর নিয়ে হামলা নয়। শুক্রবার এমনই কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে পাহাড়ে যে হিংসার আগুন মোর্চা জ্বালিয়েছিল তারপর থেকে সারাক্ষণই পরিস্থিতির উপর নজর রেখে যান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। রিচমণ্ড হিলে সরকারি আবাস থেকে নিজেই সরাসরি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। শুক্রবার ভোরেই রিচমন্ড হিল থেকে ফের দার্জিলিং-এ চলে আসেন তিনি। হেঁটে হেঁটে দিশেহারা পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের আশ্বস্ত করেন। জানান, পাহাড় থেকে সমস্ত পর্যটককে নিরাপদে শিলিগুড়ি নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর সরকার। এরপরই রিচমন্ড হিলে ফের একদফা উচ্চপদস্থ বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী।
এই বৈঠক থেকেই, বিমল গুরুংদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দেন তিনি। রীতিমতো, হুঁশিয়ারির সুরেই বলেন, 'আগুন লাগিয়ে কেউ পার পাবে না।' কোনও পিকেটিং বরদাস্ত করা হবে না বলেও জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। আইন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে নাম না করে বিমল গুরুং ও রোশন গিরিদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও রিচমন্ড হিলের এই বৈঠকে জানান মমতা।
পাহাড়ের আইনশৃঙ্খলা মোকাবিলায় এদিন একটি কমিটিও গড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিন আইপিএস জাভেদ শামিম,অজয় নন্দা ও সিদ্ধিনাথ গুপ্তাকে নিয়ে এই কমিটি তৈরি করা হয়েছে। পাহাড়ের পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং হিংসা ছড়ানোদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তার একটি নির্দিষ্ট রূপরেখা এই কমিটি তৈরি করবে বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
এদিকে, শুক্রবার সকালে দার্জিলিঙ ম্য়ালে পরিস্থিতি ঘুরে দেখার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ঠিকভাবে ফেরাতেই সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। পাহাড়-সমতল আলাদা নয়, সবাই একসঙ্গে থাকব বলে ফের একবার বার্তাও দেন মুখ্যমন্ত্রী। মোর্চার আন্দোলনের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারিও দেন। সেইসঙ্গে প্রশ্ন করেন, 'বিক্ষোভ আর অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে এ কেমন আন্দোলন? যখন ইচ্ছা হবে পাহাড়ে বনধ ডেকে দেওয়া হবে। পর্যটকদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে। এসব চলবে না। পাহাড়ের মানুষ এতদিন পর উন্নয়নের মুখ দেখেছে। এমন আন্দোলন তো উন্নয়নকেও স্তব্ধ করে দেবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দাবি-দাওয়া আন্দোলন থাকতে পারে। তা বলে পুলিশ মেরে, আগুন জ্বালিয়ে এ কোন আন্দোলন।'
বৃহস্পতিবার মোর্চার সমর্থকদের ছোড়া ইটের আঘাতে এক পুলিশকর্মীর চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাঁর শারীরিক অবস্থাও সঙ্কটজনক। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেই পুলিশকর্মীকে দার্জিলিং থেকে বাগডোরা হয়ে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ওই পুলিশকর্মী চিকিৎসার যাটবতীয় ভার রাজ্য সরকারই বহন করবে। এমনকী, ওই পুলিশকর্মীর পরিবারকেও আর্থিকভাবে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। বাকি, জখম পুলিশকর্মীদের সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হয়েছে বলেও মমতা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, দার্জিলিং ম্যাল লাগোয়া ভানু ভবনের দখল নিয়েছে পুলিশ। তার আশপাশেও ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।