বামেদের নবান্ন অভিযান ঘিরে তুলকালাম, ঠিক কী ঘটনা ঘটেছে, জেনে নিন টাইমলাইনে
পুলিশও ব্যুহ রচনা করে এই অভিযান রোখার কৌশল নিয়েছিল। ব্যারিকেডে ব্যবহার করা হয় রোবোকপ। র্যাফ, কমব্যাট ফোর্স, বিশাল পুলিশ বাহিনী কড়া নিরাপত্তায় ঘিরে রেখেছিল নবান্ন চত্বর।
বামেদের নবান্ন অভিযানকে ঘিরে রণক্ষেত্র হাওড়া ও কলকাতা। বামকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেল মঙ্গলবার। পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বাম নেতা-কর্মীরা। পাল্টা ইটবৃষ্টিতে জখম হন পুলিশকর্মীরাও। বাম কর্মীদের এই অভিযান রুখতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটানো হয়। বামকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যবহার করা হয় জলকামানও। দুপুর ১২টার মধ্যেই পুলিশ প্রস্তুত বামেদের অভিযান রুখতে। তারপর কী হল?
একনজরে দেখে নিন বামেদের নবান্ন অভিযানের টাইমলাইন
দুপুর ১২টা :
বামফ্রন্টের ১১টি কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগঠনের প্রতিনিধিদের নবান্ন অভিযান রুখতে পুলিশের ব্যুহ প্রস্তুত। কলকাতার হেস্টিং, ডাফরিন রোড, হাওড়ার ব্যাতড়, শিবপুর, সাঁতরাগাছি প্রভৃতি এলাকায় ব্যারিকেড করা হয়। ব্যারিকেডে ব্যবহার করা হয় রোবোকপ। কড়া নিরাপত্তায় ঘিরে ফেলা হয় নবান্ন চত্বর।
দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিট :
অভিযান শুরু আগেই হঠাৎ নবান্নে সুজন চক্রবর্তী, তন্ময় ভট্টাচার্য, মানস মুখোপাধ্যায়, আনিসুর রহমান ও অশোক ভট্টাচার্য। পাঁচ বাম বিধায়ক নেতা-কর্মীদের নিয়ে নবান্নে প্রবেশের চেষ্টা করেন। পুলিশ আটকে দেয় তাঁদের। ধস্তাধস্তি শুরু হয় পুলিশ ও বামনেতাদের। গ্রেফতার করা হয় পাঁচ বাম বিধায়ক-সহ নেতা-কর্মীদের।
১২ টা ৩০ মিনিট:
কলকাতার দিকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ, পিটিএস, ধর্মতলা, ডাফরিন রোডে জমায়েত হন বাম নেতা-কর্মীরা। হাওড়ার দিকেও শিবপুর, সাঁতরাগাছিতে জমায়েত। মোট পাঁচটি পয়েন্টে দিয়ে মিছিল এগোতে শুরু করে।
১২ টা ৪৫ মিনিট :
পুলিশের ব্যারিকেডে বাধাপ্রাপ্ত মিছিল। প্রথম ব্যারিকেড ভেঙে ফেললেও, রোবোকপে বাধাপ্রাপ্ত বামেদের অভিযান। পুলিশের এই কৌশল বানচাল করে ব্যারিকেড ভেঙে নবান্ন অভিমুখে মিছিল নিয়ে যাওয়াই ছিল বাম নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য। কিন্তু রোবোকপে আটকে গিয়ে শুরু হয় ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা। লাঠি-বাঁশ নিয়ে ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করা হয়। ইটবৃষ্টি শুরু করে বাম কর্মীরা।
১টা :
কিছুক্ষণ ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করলেও, বাম কর্মীদের আক্রমণের মুখে পুলিশও পাল্টা দিতে শুরু করে। প্রথম কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটানো শুরু হয়। তারপর লাঠিচার্জ করা হয়। হেস্টিংসে কলকাতার দিকের সমস্ত মিছিল জমায়েত হওয়ার পর ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ আসরে নামে। দফায় দফয়া সংঘর্ষ বাধে। পুলিশের লাঠির আঘাতে গুরুতর জখম হন বামকর্মীরা।
১ টা ১৫ মিনিট :
যেখানেই পুলিশ বাধা দেবে, সেখানেই রাস্তায় বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখানোর বার্তা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বিক্ষোভ-অভিযান চলতে থাকে। রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখানো হয়। কোথাও আবার রণংদেহি মূর্তি। পুলিশ ও বামকর্মীদের সংঘর্ষের জেরে হাওড়ার ব্যাতড় হয়ে ওঠে অগ্নিগর্ভ। ব্যাতড় মোড়ে বামকর্মীদের রুখতে জলকামানও ব্যবহার করতে হয়। টিয়ারগ্যাস ও জলকামানে ছত্রভঙ্গ হয় মিছিল।
১টা ৩০ মিনিট :
নবান্ন অভিযানে অংশগ্রহণ করে আক্রান্ত হন বিমান বসু, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো নেতারাও। হেস্টিংসে কান্তিবাবুর উপর লাঠিচার্জ করা হয়। তিনি কোমরে আঘাত পান। রাস্তার উপর শউয়ে পড়েন তিনি। তারপর সিপিএম কর্মীরাই তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান। আক্রান্ত হন বিমান বসুও। এছাড়া বহু বাম নেতা-কর্মীর মাথা ফেটেছে। রক্ত ঝরেছে।
দুপুর ২টো :
পুলিশি বাধার মুখে পড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় বামেরা। মহম্মদ সেলিম বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয়ে পালিয়ে গিয়েছেন। পুলিশও বামেদের ভয়ে লাঠিচার্জ করেছে। আসলে পুলিশ রাজ কায়েম করতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার। এ লড়াই একদিনের নয়। এইভাবে জোর করে লড়াই থামিয়ে দেওয়া যাবে না। এ লড়াই চলবে। তিনি বলেন, পুলিশ অন্যায়ভাবে তাঁদের অভিযানে বাধা দিয়েছে, কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ইট-পাটকেল ছুড়েছে। এটাই তো স্বাভাবিক। প্রমাণিত হল বামেরা ফুরিয়ে যায়নি। এ লড়াই চলতেই থাকবে।
দুপুর ২টো ৩০ মিনিট :
বামেদের মিছিল থেকে ফিরতে শুরু করে নেতা কর্মীরা। সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুরা অবস্থান বিক্ষোভ চালাতে থাকেন গান্ধী মূর্তির পাদদেশে। সেখানে জমায়েত হতে শুরু করেন মিছিল ফেরত বাম নেতারা। মেয়ো রোডে তারা অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। যানজট তখন প্রবল রূপ ধারণ করে।
৩টে ৩০ মিনিট :
বিমান বসুর আহত হওয়ার খবর পেয়ে বিধানসভা বিরোধী দলনেতা কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান দেখতে আসেন। আবদুল মান্নানের উপস্থিতিতে বাম নেতা কর্মীদের মধ্যে নতুন করে উন্মাদনা তৈরি হয়।। তখন আন্দোলন প্রশমিত করতে পুলিশ পুনরায় লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। এইসময় আক্রান্ত হন আবদুল মান্নান, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্ররাও। বেশ কেয়কজন নেতাকর্মীর মাথা ফাটে। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। কর্মসূচির সমাপ্তী ঘোষণার আগে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়।
বিকেল ৪টে :
সাংবাদিকদের উপর লাঠিচার্জের প্রতিবাদে পথ অবরোধ করা হয়। সেই অবরোধ তুলতে গিয়ে কাঁদানো গ্যাসের সেল ফাটানো হয়। ব্যাপক লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এক মহিলা সাংবাদিকসহ চার সংবাদকর্মী গুরুতর আহত হন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিকেল ৪টে ৩০ মিনিট :
মঙ্গলবার রাজ্যজুড়ে ধিক্কার দিবসের ডাক দিল বামফ্রন্ট। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এই ধিক্কার দিবসের ডাক দেন। শান্তি মিছিলে পুলিশের নির্মম লাঠিচার্জের প্রতিবাদে এই ধিক্কার দিবস পালন করা হবে।