১৫০ বারোয়ারি লক্ষ্মীপুজো, ‘লক্ষ্মীগ্রাম’ খালনা অনায়াসে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে দুর্গাপুজোর কলকাতাকেও
দুর্গোৎসবের পর স্বাভাবিক নিয়মেই আসে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর চন্দ্রালোকিত রাত। প্রতিমার নিরঞ্জন পর্বের পর দুর্গার প্যান্ডেলেই নমো নমো করে সারা হয় লক্ষ্মীপুজো। এটাই রীতি সর্বত্র। কিন্তু এ গ্রামের লক্ষ্মী আরাধনা সারা বাংলায় স্বতন্ত্র। তাই তো এ গ্রাম 'লক্ষ্মীগ্রাম' নামেই খ্যাত। হাওড়ার জয়পুরের খালনায় বিজয়া দশমী কাটলেই শুরু হয় সাজ-সাজ রব। লক্ষ্মী উৎসব ঘিরে উন্মাদনা তুঙ্গে ওঠে। আসলে এই গ্রামে দুর্গোৎসব হয় না, হয় দুর্গাপুজো। লক্ষ্মীপুজো রূপ নেয় লক্ষ্মী-উৎসবে।
তিনশো বছরের সুপ্রাচীন লক্ষ্মীপুজোগুলো এখন শুধু ঐতিহ্যের স্মারক নয়, ক্রমেই হয়ে উঠেছে থিননির্ভর। বিষয় ভাবনায় স্বতন্ত্র। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোকে অক্লেশে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে খালনার বড় উৎসব লক্ষ্মীপুজো। এ গ্রামের চারুময়ী লক্ষ্মীতলা, কৃষ্ণরায়তলা ক্ষুদিরায়তলার পুজো সুপ্রাচীন ঐতিহ্য সমন্বিত। সেই ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার স্পর্শ লাগিয়ে এখন অভিনবত্ব আনতে সচেষ্ট পুজো কমিটিগুলো।
প্রাচীন পুজোমণ্ডপগুলিকে বিষয় ভাবনায় রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয় নবগঠিত পুজো মণ্ডপগুলিও। সেই আঙ্গিকে বারুইপাড়া মিলন সংঘ, খালনা হরিসভার আমরা সবাই, খালনা বাজারের আমরা সকল উল্লেখের দাবি রাখে। জয়পুরের খালনায় দেড়শোর বেশি বারোয়ারি লক্ষ্মীপুজো হয়। এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ৩৫টি বড়ো বাজেটের পুজো।
হাওড়ার এই প্রাচীন গ্রাম খালনা। খালনার মানুষের বরাবরই ঝোঁক ছিল ব্যবসার দিকে। সেই ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি থেকেই উদ্ভব হয় এ গ্রামের লক্ষ্মীপুজোর। ক্রমেই ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির বদল ঘটে বারোয়ারির রূপ নিতে থাকে পুজো। কালের নিয়মেই তা পরিণত হয় উৎসবে। এই উৎসবমুখর লক্ষ্মীপুজো দেখতে ঈর্ষণীয় ভিড় জমে কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে।
গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে আত্মীয় পরিজনের সমারোহে। দূরদুরান্তের দর্শনার্থীদের সমাগমে পরিপূর্ণ হয় গ্রামের সমস্ত পুজোমণ্ডপ। সারারাত ধরে দর্শনার্থী সমাগম দুর্গাপুজোর কলকাতাকে মনে করিয়ে দেয়। গ্রাম জুড়ে তৈরি হয় এক অলৌকিক পরিমণ্ডল। তিনদিন ধরে জমজমাট মেলা-পরিবেশ এক কথায় অনন্য, অসাধারণ।