সম্পর্কের টানাপোড়েনেই খুন আইনের ছাত্রী, পুলিশি জেরায় গুলি চালানোর কথা স্বীকার স্বামীর
সম্পর্কের টানাপোড়েনেই খুন কল্যাণী আইন কলেজের প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্রী মৌমিতা বিশ্বাস। বহু সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় স্বামীর আক্রোশের শিকার হতে হয় বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়া, ১০ ডিসেম্বর : সম্পর্কের টানাপোড়েনেই খুন কল্যাণী আইন কলেজের প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্রী মৌমিতা বিশ্বাস। বহু সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় স্বামীর আক্রোশের শিকার হতে হয় বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। পুলিশি জেরায় ধৃত স্বামী নিখল সেন স্বীকার করেছে, সে-ই গুলি করে খুন করে মৌমিতকে।
কল্যাণী আইন কলেজের ওই ছাত্রী মৌমিতা বিশ্বাসের গুলিবিদ্ধ দেহ বারাকপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধার থেকে উদ্ধার হওয়ার পরই রহস্য দানা বাঁধে, তাঁকে কে খুন করতে পারে? কেনই বা খুন ওই মেধাবী ছাত্রী? তদন্ত উঠে আসে, মাত্র এক বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল টিটাগড়ের যুবক নিখিল সেনের সঙ্গে। হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে তাঁদের পরিচয়। তারপর প্রেম ও পরিণয়। কিন্তু তাঁদের বিবাহিত জীবন একেবারেই মধুর ছিল না। মৌমিতার বাঁধনছাড়া জীবন পছন্দ হয়নি নিখিলের।
দু'জনের বনিবনা না হওয়ায় মৌমিতা ফিরে আসে বাপের বাড়িতে। ভর্তি হয় কল্যাণীর বেসরকারি আইন কলেজে। এরই মধ্যে একাধিক পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে মৌমিতার। পুলিশ তদন্তে উঠে আসে, এদিনই এক বন্ধুর সঙ্গে পার্কে দীর্ঘ সময় কাটান মৌমিতা। তারপর তাঁকে স্টেশনে ছাড়তেও আসেন তিনি।
পুলিশ জানতে পেরেছে, বন্ধুকে ছেড়ে দেওয়ার পরই নিজেই ফোন করে নিখিলকে ডাকে মৌমিতা। এরপর উভয়েই আবেগতাড়িত হয়ে পড়ে। নিজেদের মধ্যে পুরনো সম্পর্কের কথা উঠে আসে। তখনই মৌমিতার বহু সম্পর্ক নিয়ে দু'জনের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। চরম আক্রোশ থেকে স্ত্রীকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দেয় নিখিল। মাথা ও বুক লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায় সে।
খুনের ঘটনার পিছনে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করেছিল পুলিশ। সেইমতো নিখিলকে আটক করে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পুলিশি জেরার মুখে নিখিল স্বীকার করে এই খুনের কথা। বাসুদেব বসু নামে তরুণীর এক বন্ধুকেও আটক করা হয়েছে।
তবে এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠে পড়ে, মৌমিতার ডাকেই যদি নিখিল এসে থাকে, তবে সে কি আগে থেকেই মৌমিতাকে খুন করার পরিকল্পনা কষে রেখেছিল। তারপর সুযোগ আসতেই এদিন নিখিল প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে। খুন করে স্ত্রীকে। তা না হলে তার
কাছে পিস্তল এল কী করে?
যে জায়গায় গুলি চালিয়ে খুন করা হয় অর্থাৎ বারাকপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে জলপ্রকল্পের কাছে, তার পাশেই ছিল বিএড কলেজ। বিএড কলেজের নিরাপত্তারক্ষী এই গুলির আওয়াজ শুনতে পান। তারপর তিনি ওই জায়গা থেকে একটি বাইক আরোহীকে পালিয়ে যেতে দেখেন। স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে এলে খবর দেওয়া হয় থানায়। পুলিশ মৌমিতাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
মৌমিতার বাপের বাড়ির সদস্যদের অভিযোগ ছিল মৌমিতার স্বামী বা শ্বশুর বাড়ির লোকজনের মদতেই এই খুন হয়েছে। মৌমিতা বাড়ির অমতেই বিয়ে করেছিল নিখিলকে। তারপর বাবার সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক আবার ভালো হয় নিখিলকে ছেড়ে আসার পর।