খেয়াল পড়ে রিজওয়ানুরকাণ্ড, আড়ালে কিন্তু এখনও চলছে সেই মামলা, জেনে নিন নয়া আপডেট
প্রায় এক দশক আগে রিজওয়ানুরকাণ্ডে কেপে উঠেছিল কলকাতা থেকে রাজ্য। এক মুসলিম ছেলে এবং হিন্দু মেয়ের বিবাহকে ঘিরে তুলকালাম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
রিজওয়ানুর মামলায় সিবিআই-এর মামলা থেকে রেহাই দেওয়া টোডি পরিবারের আবেদন খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্টের সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বেঞ্চ। একই সঙ্গ আইপিএস অজয় নন্দা এবং বাকি দুই পুলিশ কর্মীর আবেদনও খারিজ হয়ে গেছে।
২০০৭-এর ২১ সেপ্টেম্বর পাতিপুকুরে রেললাইনের ধার থেকে রিজওয়ানুর রহমানের দেহ উদ্ধার হয়। তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার আগেই,তৎকালীন পুলিশ কমিশনার জানান, রিজওয়ানুর রহমান আত্মহত্য়া করেছেন। কলকাতা পুলিশের তদন্ত চলতে থাকে। কিন্তু এরপরেও আন্দোলনের চাপে ২০০৭-এর ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট ঘটনার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়।
সিবিআই তদন্তে জানায়, ঘটনাটি আত্মহত্যা। কিন্তু তাতে প্ররোচনা ছিল। সিবিআই-এর এই বয়ানের ওপর ভিত্তি করে ২০১১ সালে সরকার অশোক টোডি, প্রদীপ টোডি, অনিল সারোগী এবং সৈয়দ মহিউদ্দিন ওরফে পাপ্পু এবং আইপিএস অজয় নন্দা, পুলিশকর্মী সুকান্তি চক্রবর্তী এবং কৃষ্ণেন্দু দাসের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলা দায়ের করে। সেই মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যই অভিযুক্তদের আবেদনের শুনানি ছিল সোমবার। বিচারপতি সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় অভিযুক্তদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ নিম্ন আদালতে আগের মতোই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা চলবে।
দুহাজার সাত সালে পুজোর আগে রিজওয়ানুরের অস্বাভাবিক মৃত্যু এবং পুলিশ আধিকারিকদের অদূরদর্শী বয়ান তৎকালীন বাম সরকারের ভিতটাই যেন নড়িয়ে দিয়েছিল।
বেসরকারি সংস্থায় মাল্টিমিডিয়া প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে শিক্ষক রিজওয়ানুর রহমানের প্রেমে পড়েন কোটিপতি ব্যবসায়ী লাক্স কোজির মালিক অশোক টোডির মেয়ে প্রিয়ঙ্কা। ২০০৭-এর ১৮ অগাস্ট দুই বাড়ির অজান্তে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিয়ে করেন তাঁরা। ৩১ অগাস্ট প্রিয়ঙ্কাকে তাঁদের পার্কসার্কাসের বাড়িতে নিয়ে যান রিজওয়ানুর। এর পরেই রিজ ও প্রিয়ঙ্কা তার বাবা অশোক টোডির কাছ থেকে বাঁচতে পুলিশের কাছে নিরাপত্তার আবেদন করেন। যদিও, প্রিয়ঙ্কা পরে জানিয়েছিলেন, তাঁকে অন্ধকারে রেখেই লালবাজারে পুলিশ বিভিন্ন কাগজে তাঁকে দিয়ে সই করিয়েছিল।
পরিবারের সঙ্গে পদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের যোগাযোগের কারণে রিজ ও প্রিয়ঙ্কাকে লালবাজারে একাধিকবার পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ ওঠে। প্রিয়ঙ্কাকে না ছাড়লে রিজওয়ানুরকে ঝামেলার মুখে পড়তে হতে পারে বলেও পুলিশের তরফে হুমকি দেওয়া হত বলে অভিযোগ। সরকারিভাবে বিয়ে রেজিস্ট্রি হওয়ার আটদিন পর অর্থাৎ ২০০৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রিজকে ফের লালবাজারে তলব করা হয়েছিল।
এবং লালবাজারে গুণ্ডা-দমন শাখা তার বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা দায়ের করার হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ ওঠে। সাতদিন পরে প্রিয়ঙ্কা শ্বশুরবাড়িতে ফেরত আসবে, এই শর্তে সেই দিনই প্রিয়ঙ্কা টোডিকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে রাজি হয়ে যান রিজ। এরমধ্যে কেবল ১১ সেপ্টেম্বর ফোনে দুজনের কথা হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর প্রিয়ঙ্কা ফেরত না আসায় ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেন রিজ। কিন্তু তা না হওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন রিজওয়ানুর।
এরপর ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে পাতিপুকুরে রেললাইনের ধার থেকে রিজওয়ানুরের দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ ওঠে রিজওয়ানুরকে খুন করা হয়েছে এবং সেই ঘটনায় পদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা যুক্ত বলে অভিযোগ করেছিল তৎকালীন বিরোধী দলগুলি। সিবিআই তদন্তের দাবিও জানিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধীনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।