বাংলা Vs ওড়িশা : 'রসগোল্লা' বাংলারই এখনও প্রমাণ করতে পারেনি রাজ্য!
কলকাতা, ২৩ আগস্ট : রসগোল্লার অধিকার নিয়ে ইতিমধ্যেই বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে সম্পর্কের স্বাদ টক হয়েছে বাংলা ও ওড়িশার। রসগোল্লার ভৌগলিক নির্দেশক ছাপ বা জিআই ট্যাগ নিতে আইনি লড়াইয়ে নেমে পড়েছেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কিন্তু সূত্রের খবর, রসগোল্লা যে বাংলার তা প্রমাণ করতে তো বেশ হিমশিম খাচ্ছেন এরাজ্যের তাবড় মিষ্টি ব্যবসায়ী, ফুড টেকনোলজিস্ট ও সরকারি আমলারা। [রসগোল্লা তুমি কার? জোর তরজা ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে!]
ব্য়াপারটা একটু খোলসা করেই বলা যাক নয়। রসগোল্লার জিআই ট্যাগ দেওয়ার আগে ১০ জিআই বিশেষজ্ঞের দল শহরে এসেছে। এরাজ্যের তাবড় মিষ্টি ব্যবসায়ী, ফুড টেকনোলজিস্ট ও সরকারি আমলারা একে একে তাদের কাছে গিয়ে 'রসগোল্লা বাংলার' এই মর্মেই সওয়াল করছেন। জিআই বিশেষজ্ঞরা তাদের চোখা চোখা প্রশ্ন করে আরও বিপদে ফেলছেন। মুখে জোর দিয়ে বললেও কিছুতেই জিআই বিশেষজ্ঞদের কাছে এরাজ্যের বিশিষ্টরা প্রমাণ করে উঠতে পারছেন না যে রসগোল্লায় অধিকারটা আসলে তাদেরই।
সোমবারের সওয়াল জবাব, পরীক্ষা-নিরিক্ষার পরে বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানার পক্ষে সওয়ালজবাব এবং তথ্যপ্রমাণে সন্তুষ্টিপ্রকাশ করেছেন জিআই বিশেষজ্ঞরা। একমাসের মতো তাদের ওয়েবসাইটে বিষয়টি সাধারণ মানুষের জন্য তুলে ধরা হবে। কোনও আপত্তি না আসলে এই দুই মিষ্টান্নকেই জিআই ট্যাগ দেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রসগোল্লার ক্ষেত্রে এত সরল সমাধানে আসতে পারছেন না জিআই বিশেষজ্ঞরা।
রসগোল্লা নিয়ে আরও "টেকনিক্যাল ডিটেল" রাজ্যের কাছে চেয়েছে জিআই বিশেষজ্ঞদের প্রতিনিধি দল। অর্থাৎ রসগোল্লার রস কত মোটা বা পাতলা, রসগোল্লার গা কতটা মসৃণ বা খড়খড়ে, স্পঞ্জ রসগোল্লা কতটা তুলতুলে, রসগোল্লার গুনগত মান ইত্যাদি বিষয় নিয়ে যাবতীয় খুঁটিনাটি রিপোর্ট জমা দিতে হবে বাংলাকে।
তবে জিআই বিশেষজ্ঞ দলের একাংশ মনে করছেন নামের মিলটাই সব নয়। কথক নাচ যেমন বিভিন্ন ঘরানার হয় কোনও একটি মিষ্টিও ভিন্ন ঘরানার হতে পারে। সেক্ষেত্রে রসগোল্লা বাংলা ও ওড়িশার আলাদা আলাদাও হতে পারে। সবধরনের রসগোল্লাই যে বাংলার তা কখনওই বলা যাবে না।
সোমবার, সল্টলেকের পেটেন্ট অফিসে রসগোল্লার হয়ে সওয়াল করতে উপস্থিত ছিলেন ঐতিহাসিক থেকে, খাদ্যবিশেষজ্ঞ, মিষ্টান্ন স্রষ্টা থেকে সরকারি আমলারা। রসগোল্লা যে ওড়িশার পহেলার ক্ষীরমোহন থেকে আলাদা তা প্রমাণ করার জন্য পহেলার রসগোল্লা এবং কলকাতার স্পঞ্জ রসগোল্লাকে একেবারে সশরীরে হাজির করানো হয়েছিল।
রাজ্যের প্রতিনিধিদের তরফে জানানো হয়েছে, যেভাবে শ্রীচৈতন্যর সময় থেকে ছানাবড়া থেকে গোলক এবং তা ১৮৬৫ সালে রসগোল্লায় পরিণত হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য আমরা বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে রেখেছি। তার জন্য জিআই প্রতিনিধিরা আমাদের প্রশংসাও করেছেন। তবে আরও কিছু নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর ও তার সংক্রান্ত কাগজপত্র চেয়েছে প্রতিনিধি দল। আমরা খুব শীঘ্রই তা জমা দিয়ে দেব।
তবে খুশির খবর একটাই, একটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে বাংলাকে রসগোল্লার হকদার হিসেবে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছে জি আই নিয়ামক সংস্থা। সব নির্দেশ মেনে রাজ্য ফের রসগোল্লা-সংক্রান্ত নথি পাঠালে তা খুঁটিয়ে দেখা হবে। তার পরে বাংলার দাবি প্রকাশ করে কোনও মহলে এ নিয়ে আপত্তি আছে কি না, তা জানতে চাওয়া হবে। চার মাসের মধ্যে কেউ আপত্তি না-জানালেনেই বাংলার রসগোল্লার জি আই তকমা আদায়ে আর কোনও সমস্যা হবে না।