লক্ষ্মীপুজোর থিমের লড়াইয়ে খালনাকে জোর টক্কর বাগনানের জোকার
জয়পুরের খালনার লক্ষ্মীপুজোর জনপ্রিয়তায় ভাগ বসাতে তৈরি বাগনানের জোকা। মা লক্ষ্মীর আরাধনায় খালনাই ছিল বাংলায় সর্বেসর্বা। এখন লক্ষ্মীদেবীর আবাহনে খালনার চ্যালেঞ্জার হিসাবে এগিয়ে এসেছে বাগনানের জোকা। প্রাচীনত্ব বা সাবেকিয়ানায় টেক্কা দেওয়া সম্ভব নয় ঠিকই, কিন্তু থিম বা বিষয়ভাবনায় খালনার জৌলুস খর্ব করতে একেবারে আটঘাট বেঁধেই নেমেছে জোকার সর্বজনীন লক্ষ্মী পুজো কমিটিগুলি।
ব্যাবসা-বাণিজ্য নির্ভর খালনায় দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা গত দুই শতাধিক বৎসর ধরে মহোৎসব। দুর্গাপুজোর পর বিজয়ার বিষাদে একই প্যান্ডেলে মা লক্ষ্মীর আরাধনাই যখন বাংলাজুড়ে হয়ে থাকে, তখন একমাত্র খালনাতেই লক্ষ্মীপুজো হয়ে উঠেছিল সর্বজনীন। দুর্গাপুজো এখানে বড়ো উৎসব নয়, খালনাবাসী সকল স্বপ্ন, জল্পনা-কল্পনা লক্ষ্মীপুজোকে ঘিরে। তাই খালনায় দেখা যায় সর্বজনীন লক্ষ্মীপুজো এবং থিমের আড়ম্বর। এখন খালনার পাশাপাশি জোকাও মেতেছে লক্ষ্মী আরাধনায়।
বাগনানের ছোট্টো একটি গ্রাম জোকা। কৃষিনির্ভর জোকার তাঁতিপাড়ার বাসিন্দারা প্রতিবারই কৃষিকাজে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতেন। কিছুতেই দুঃখের দিন শেষ হচ্ছিল না জোকাবাসীর। গ্রামের শ্রী ফেরাতে তারপরই শুরু হয় লক্ষ্মীপুজো। আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে সেই যে লক্ষ্মীপুজোর শুরু, তা কলেবরে বড় হতে থাকে।
এরই মধ্যে উন্নতি হয়েছে গ্রামের, কৃষিকাজে স্বনির্ভর হয়েছে গ্রাম। এ গ্রামের ফসলের এখন কলকাতা ও শহরতলির বিভিন্ন বাজারে বিরাট সুনাম। তাই বছর বছর লক্ষ্মীপুজোর আড়ম্বর বেড়েছে। তা ক্রমেই রূপ নিয়েছে সর্বজনীন লক্ষ্মী উৎসবে। খালনার অনুকরণেই লক্ষ্মী আরাধনায় জোকা হয়ে উঠেছে স্বতন্ত্রের অধিকারী।
থিমের জোয়ার, বড়ো বড়ো প্যান্ডেল, মাতামাতি, আশা-আকাঙ্খা, সবকিছুই প্রত্যেক বাঙালির দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করেই। খালনাই প্রথম দুর্গোৎসবকে বাদ রেখে নিজেদের স্বপ্নকে সাজিয়েছে। আর সেই স্বপ্নে ভাগ বসিয়েছে বাগনানের জোকাও। তারাও লক্ষ্মীপুজোকেই তাদের বড়ো পুজো হিসেবে মেনে এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে জোকার মোট পুজো সংখ্যা ২৪টি।
মা লক্ষ্মীর আরাধনায় তারাও নেই পিছিয়ে। লক্ষ্মীপুজোর থিমে এগিয়ে চলেছে প্রত্যেকটি ক্লাব। শীতলামাতা সংঘের প্রাগৈতিহাসিক যুগের মণ্ডপে আর্টের লক্ষ্মী প্রতিমা জোকা গ্রামে এনেছে নতুন আমেজ। পাওয়ার সংঘের মণ্ডপসজ্জার উপস্থাপনা 'নকশি পথের গাঁ'। অদ্ভুত নৈপুণ্যে এই পুজো কমিটি পল্লিগ্রামের সামাজিক জীবনকে।
ভাইভাই সংঘের আদিম মানব সভ্যতার থিমও পিছিয়ে নেই। জোকার প্রেমিক সংঘ, যুবক সংঘ, অ্যাকশন কমিটিও নিজেদের উজার করে দিয়েছে মা লক্ষ্মীর আরাধনায়। প্রায় প্রতিটি পুজোর মণ্ডপই ৩০-৪০ ফুট উচ্চতার। সব মিলিয়ে এবার খালনার সঙ্গে জোর লড়াই জোকার।