শ্রীনু হত্যায় এবার সিবিআই তদন্ত চাইলেন খোদ দিলীপ ঘোষ
আকারে-ইঙ্গিতে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন শ্রীনু খুনে বড় মাথা দিলীপবাবু। এবার তাই ‘অভিযুক্ত’ দিলীপ ঘোষ সিবিআই তদন্তের দাবিতে চিঠি লিখে ফেললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ জানুয়ারি : 'দ্য ডন' শ্রীনু হত্যাকাণ্ডে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন শ্রীনুর স্ত্রী পূজা নাইডু। আকারে-ইঙ্গিতে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন শ্রীনু খুনে বড় মাথা দিলীপবাবু। এবার তাই 'অভিযুক্ত' দিলীপ ঘোষ সিবিআই তদন্তের দাবিতে চিঠি লিখে ফেললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে। শ্রীনুকে নিয়ে সংঘাত চরমে উঠল তৃণমূল ও বিজেপি-র।
খড়গপুরের ডন নামই সম্প্রতি তাঁর খ্যাতি ছিল। তা থেকেই তিন বিজেপি ছেড়ে হয়ে উঠলেন রাজ্যের শাসকদলের এক যুবনেতা। এরই মধ্যে ঘটে গেল নৃশংস হত্যাকাণ্ড। তৃণমূল পার্টি অফিসের ভিতরে ঢুকে দুষ্কৃতীরা নৃশংসভাব খুন করল শ্রীনুকে। খড়গপুরের মাটিতেই 'বেতাজ বাদশা'র সমাধি দিয়ে দিল একদা তাঁর অনুগামীরা।
কাহিনির শেষ এখানেই নয়। শ্রীনু হত্যাকাণ্ডে ইতিমধ্যে আটজনকে গ্রেফতার করলেও এর পিছনে বড় মাথায় রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। বাসব রামবাবুর নাম উঠে এই হত্যাকাণ্ডে উঠে এলেও, তাঁর মাথার উপর কোনও বড় মাথা থাকতে পারে বলে আভাস দিয়েছিলেন পুলিশ সুপার। এমনকী রেলের মাফিয়া জগতের লড়াইয়ে এই খুন হলে এর মধ্যে যে রাজনৈতিক চাপানউতোর থাকতে পারে, তাও জানিয়েছিলেন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ।
এর মধ্যেই বোমা ফাটান পূজা নাইডু। শ্রীনুর স্ত্রী, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর। তাঁর বয়ানে চাঞ্চল্যকর মোড় নেয় শ্রীনু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত। পূজাদেবী সরাসরি অভিযোগ করেন বসেন, শ্রীনকে হত্যার মূলচক্রী বিজেপি রাজ্য সভাপতি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আবার খড়গপুরের বিধায়ক।
দিলীপ ঘোষ বনাম শ্রীনু নাইডু- লড়াইটা চলছিল বিগত দেড়-দু'বছর ধরেই। আগে বিজেপি-র ছত্রছায়ায় থাকলেও, পরে গেরুয়া শিবির ছেড়ে শ্রীনু ও তাঁর স্ত্রী যোগ দেন নীল-সাদা শিবিরে। বিজেপি-র হয়ে কাউন্সিলর হলেও, বিধানসভা ভোটের আগে শ্রীনুর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী পূজাও দলবদল করে তৃণমূলে যোগ দেন।
বিধানসভায় শ্রীনুর বিরুদ্ধে দিলীপ ঘোষের সভা পণ্ড করার অভিযোগ ওঠে। তখন দু'জনের মধ্যে বাদানুবাদ, হুমকি-পাল্টা হুমকির ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ গত সাত-আটমাস ধরে শ্রীনুর সঙ্গে দিলীপ ঘোষের লড়াইটা অন্য জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল। ভোটের শ্রীনু যেমন মাইক বন্ধ করে, আলো নিভিয়ে তাঁর সভা পণ্ড করে দেন, তেমনই প্রকাশ্যে দুই দোর্দন্ডপ্রতাপ পরস্পরকে হুমকি দেন। সেই হুমকি থেকেই শ্রীনুর খুনের পিছনে দিলীপ ঘোষের নাম উঠে পড়ে। এখন পূজা সেই নাম জোর দিয়ে উল্লেখ করায় পুলিশও নড়চড়ে বসছে।
এই মুহূর্তে তাই দিলীপবাবুর মতো ডাকাবুকো নেতাও বেশ শঙ্কায় রয়েছেন। তিনি মনে করছেন জয়প্রকাশ মজুমদারকে ফাঁসানো হয়েছে। এবার তাঁকেও মিথ্যে মামলায় গ্রেফতার করা হতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকেই তিনি আগেভাগে সিবিআই তদন্ত চেয়ে চিঠি লিখে ফেললেন কেন্দ্রের কাছে। অবশ্য তিনি প্রথমেই এই ঘটনায় সিবিআই চেয়েছিলেন। তাঁর যুক্তি, কী কারণে এই খুন, কারা এই খুন করেছে, তার প্রকৃত তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
পুরসভার চেয়ারম্যান থেকে শ্রীনর স্ত্রী পূজা। সবার মুখেই দিলীপ ঘোষের নাম। তা যে পুলিশ শিখিয়ে দিচ্ছে, সেই অভিযোগ জানাতেও ভুললেন না দিলীপবাবু। এমনকী তিনি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষকেও তদন্তে অন্তর্ভুক্ত করতে আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর মোবাইলের কললিস্ট খতিয়ে দেখার দাবিও তোলা হয়। পুলিশ সুপার হয়েও তিনি যে নির্দিষ্ট একটা রাজনৈতিক দলের হয়ে কথা বলেন, তাঁদের নির্দেশে চলেন, সেই অভিযোগও কেরন দিলীপবাবু।