গানস্যালুট আর মানুষের চোখের জলে শেষ বিদায় গঙ্গাধরের
কলকাতা, ২০ সেপ্টেম্বর : থিক থিক করছে ভিড়। যতদূর দেখা যায় শুধু কালো কালো মাথা। কফিনবন্দি হয়ে ঘরের ছেলে ফিরছে। তাঁকে শেষ বিদায় জানাতে মানুষের ঢল নেমেছে হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম যমুনাবালিয়ায়। সেনা পরিবেষ্টিত হয়ে দেহ নামল গ্রামের মেঠো পথের ধারে। সামরিক মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হল শহিদ গঙ্গাধর দোলুইয়ের।
মঙ্গলবার তাঁর বাসভবন জগৎবল্লভপুরে এক বিশাল শবযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। গার্ড অফ অনার, গানস্যালুট আর বহু মানুষের চোখের জলে চিরবিদায় নিল ভারতের বীর শহিদের নশ্বর দেহ।
ঠিক ভোর সাড়ে পাঁচটা। হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের যমুনা বালিয়া গ্রামে পৌঁছল গঙ্গাধরের কফিনবন্দি মরদেহ। প্রথমে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর বাসভবনে। সেখানে কিছুক্ষণ কফিন রাখার পর শহিদ জওয়ানের দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে গ্রামের শ্মশানে। সেনাবাহিনীর তরফ থেকে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। গঙ্গাধরের দেহে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়, হাওড়ার জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস, হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন এবং উপস্থিত সেনাকর্তারা।
সাধারণ কৃষিজীবী পরিবারের সন্তান গঙ্গাধর দলুই। বছর দুয়েক আগে যোগ দিয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে। চোখে ছিল একরাশ স্বপ্ন। দেশ রক্ষার লড়াইয়ে গিয়েছিলেন। ভারত মায়ের সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে তাঁর বীরের মতো মৃত্যু ঘটেছে। মাত্র ২৩ বছর বয়স। দৌড়বিদ হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি ছিল এলাকায়। অ্যাথলেটিক্সে দক্ষতাই তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল ভারত মায়ের কৃতী সন্তান হওয়ার রাস্তায়।
জগৎবল্লভপুরেরই শোভারানি মেমোরিয়াল কলেজে বিএ প্রথম বর্ষে পড়ার সময় সেনাবাহিনীতে চাকরি পান তিনি। খেলাধূলার পাশাপাশি পড়াশোনাতেও ভালো ছিলেন গঙ্গাধর। ২০১৪ সালের শেষদিকে সেনাবাহিনীর চাকরিতে যোগ দেন তিনি। প্রথম পোস্টিং হয় বেঙ্গালুরুতে। এরপর জলপাইগুড়ির বিন্নাগুড়ি হয়ে গত ১৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের উরিতে বদলি হন তিনি। সেই বদলির ঠিক একমাসের মাথায় ঘটে গেল জঙ্গি হামলা। জঙ্গিদের হাত থেকে দেশ বাঁচানোর লড়াইয়ে প্রাণ দিলেন বীর সৈনিক গঙ্গাধর। তাঁর নশ্বর দেহ বিলীন হয়ে গেলেও বীরত্বের যে গাথা রচনা করে গেলেন গঙ্গাধর, তা চিরদিন অমর হয়ে রয়ে যাবে দেশের ইতিহাসে।