বন্যায় বিপর্যস্ত মালদা, প্লাবিত বিএসএফ ক্যাম্প, এখনও বিচ্ছিন্ন হরিশ্চন্দ্রপুর
ক্রমশ স্বাভাবিকের পথে উত্তরবঙ্গ। উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মহানন্দার জল বাড়তে থাকায় মালদহের পরিস্থিতি খারাপের দিকে। এখনও বিচ্ছিন্ন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর
ক্রমশ স্বাভাবিকের পথে উত্তরবঙ্গ। উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মহানন্দার জল বাড়তে থাকায় মালদহের পরিস্থিতি খারাপের দিকে।
মালদা: মহানন্দার জল বাড়ায় মালদার ইংলিশবাজারে নতুন করে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছ। গাজোল, আলাল, সামসি, চাঁচোলে জল ঢুকেছে নতুন করে। গাজোল, চাঁচল ১-২, হরিশচন্দ্রপুর ১-২, ও রতুয়া ১-২ ব্লকের কয়েক লক্ষ মানুষ জলবন্দি হয়ে চূড়ান্ত দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
এই মুহূর্তে গাজোলের মাতইল থেকে আলাল পর্যন্ত ৮১ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়েই মহানন্দার জল বইছে। আলাল, বইরাগাছি, আহোরা, কালিনগর সহ বিস্তীর্ণ এলাকা এখন মহানন্দা শ্রীমতীর জলে জলমগ্ন। এদিকে হরিশচন্দ্রপুর ১-২ ব্লকের ইসলামপুর, গোবরাঘাট, মিয়াহাট, ভাদুরিয়া, মাগুরা সহ প্রায় ২০তি গ্রাম জলমগ্ন। ভেঙেছে সড়ক পথের যোগাযোগ সহ বাঁধ। বাংরুয়া গ্রামের কাছে সেতু ভেঙে যাওয়ায় হরিশ্চন্দ্রপুরের ২টি ব্লক বর্তমানে বিচ্ছিন্ন। জল ঢুকে পড়েছে প্রাথমিক সাস্থকেন্দ্র সহ চিকিৎসালয়ে। ত্রাণের ক্ষোভ দেখাদিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। শনিবার ট্রেনের দাবিতে স্থানীয়রা হরিশচন্দ্রপুর ভালুকা রাজ্যসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ৯ লক্ষ মানুষ বন্যা দুর্গত। ১২০টি ত্রাণ শিবির রয়েছে মালদায়। সেখানে কমপক্ষে ৭০ হাজার মানুষ রয়েছেন। মোট ৯১টি স্পিডবোট দুর্গতদের উদ্ধারের জন্য নামানো হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার, গুঁড়ো দুধ, জলের পাউচ ও কেরোসিন তেল বিলি করা হচ্ছে।
বাদ যায়নি সীমান্ত রক্ষী বাহিনীদের বিওপিগুলোও। জেলার বেশ কয়েকটি বিওপি এখন জলমগ্ন। সীমায় করা নজরদারী চলছে হাঁটু-গোলা জলের ওপর। বিওপি গুলোতে হঠাৎ জল ঢুকে পড়ায় চরম সমস্যায় পড়েছে বিএসএফ কর্মীরাও।
উত্তর দিনাজপুর: জেলা সদর রায়গঞ্জে জল নেমেছে। তবে ইটাহারে এখনও জল জমে রয়েছে। মালদা থেকে জল না সরলে ইটাহার থেকেও জল সরবে না। রায়গঞ্জ থেকে মালদা বাস-চলাচল শুরু হলেও, জাতীয় সড়কে এখনও জল রয়েছে। তাই বুনিয়াদপুর হয়ে বাস মালদায় পৌঁছচ্ছে অনেকটা ঘুরপথে। যেখানে জাতীয় সড়ক হয়ে বাস গেলে ৭৫ কিলোমিটার যেতে হয়, সেখানে ঘুরপথে ১১০ কিলোমিটার যেতে হচ্ছে। চুনামারি ও দোমোহনাতে সুধানী নদীর ওপরের সেতু ভেঙে গিয়েছিল। পাইপ বসিয়ে ধীরে ধীরে সেই সেতু দিয়ে গাড়ি চলছে। মালদা থেকে বুনিয়াদপুর, কালিয়াগঞ্জ, রায়গঞ্জ, করণদিঘি হয়ে ডালখোলায় যাচ্ছে বাস। ৬-৭ ঘণ্টার রাস্তা পৌঁছতে লাগছে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা। রায়গঞ্জ থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত জাতীয় সড়ক দিয়ে যান চলাচল আগের থেকে দুর্ভোগ অনেকটাই কমেছে।
ত্রাণ না পাওয়ায় ইটাহার ব্লকের বিডিও অফিস ভাঙচুর করে বন্যাদুর্গতরা। ভাঙচুরের পাশাপাশি লুট করা হয় অফিসে থাকা আলমারি, চেয়ার, কম্পিউটার সহ অন্য সামগ্রী। জেলা পুলিশ সুপার ও আইসি-র নেতৃত্বে পুলিশকর্মীরা পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় দুর্গতরা। দুর্গতদের অভিযোগ, বন্যার ফলে তারা বাড়িঘর ছেড়ে চলে এলেও সরকারি কোনও সাহায্য পায়নি।
দক্ষিণ দিনাজপুর: দক্ষিণ দিনাজপুরের বন্যা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। এদিকে মহানন্দা নদীর জল ঢুকে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে হরিরামপুর ব্লকের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। বালুরঘাট এলাকায় জল বেশ কিছুটা নেমেছে। মূলত আত্রেয়ী, পুনর্ভবা, টাঙ্গোন ও যমুনার জল নামায়, বালুরঘাট থেকে জল সরতে শুরু করেছে। তবে বালুরঘাট থেকে হিলি ও বালুরঘাট থেকে তপন যাওয়ার রাস্তায় যান-চলাচল এখনও বন্ধ।