বাড়িতে বইছে নদীর স্রোত, দিনাজপুরবাসীর পথেই জীবন, বাড়ছে মৃত্যুও
জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার- তিন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি। তবে ঘোরালো দুই দিনাজপুর ও মালদহের পরিস্থিতি। বালুরঘাট ও রায়গঞ্জও জলমগ্ন।
প্লাবনের জল ঢুকে কেড়ে নিয়েছে সুখের আবাসটুকুও। ছেলে-মেয়ের হাতে ধরে তাই পথেই ঘর বেঁধেছেন বন্যাদুর্গত মানুষেরা। আর সেই অস্থায়ী আবাসের খোঁজে বেরিয়েই অনেকে তলিয়ে যাচ্ছেন বানের জলে, অনেকে সাপের কামড়ে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছেন। দুই দিনাজপুরের হাল হকিকৎ প্রায় একই রকমই। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
[আরও পড়ুন:কোশি, মহানন্দার জল ঢুকে বিহারের বন্যা পরিস্থিতি আরও জটিল, মৃত বেড়ে ৫৬ জন]
অসুস্থ হলেও চিকিৎসার জো নেই। কারণ দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট শহরে জলে ভাসছে হাসপাতাল। বিপাকে রোগীরা। একই অবস্থা উত্তর দিনাজপুরের সদর রায়গঞ্জেও। গ্রামের পর শহরের মানুষও জলে ভাসছেন। এক গলা জল পেরিয়ে কোনওরকমে রসদ আনছেন বাসিন্দারা। একতলা জলে ডুবে রয়েছে, দোতলার ঘরে কোনওরকমে দিনযাপন করছেন মানুষ, কারও আশ্রয় ছাদে। কেউ ঘর-বাড়ি হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বড় রাস্তায়। তাঁবু খাটিয়ে মা্থা গোঁজবার অস্থায়ী একটি জায়গা করে নিয়েছেন কোনওরকমে। এরকমই অসহায় চিত্র দুই দিনাজপুরের।
বুধবার দক্ষিণ দিনাজপুরে দু-জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। একজন বন্যার জলে ডুবে মারা গিয়েছেন, এক যুবতীর মৃত্যু হয়েছে সাপের কামড়ে। অনেকেই সাপের কামড় খেয়ে ভর্তি রয়েছে হাসপাতালে। বংশীহারিতে গ্রামীণ হাসপাতাল জলের তলায়। ফলে সদ্যোজাত সন্তানদের নিয়ে ঘোর বিপাকে পড়েছন প্রসূতিরা। এর ফলে শুধু দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১। বেসরকারি মতে এই সংখ্যা আরও বেশি বলে দাবি।
আত্রেয়ী ও পুনর্ভবার জল বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। দু-কূল ছাপিয়ে জল বইছে নদীগুলির। ফলে ২৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে এবার বন্যা পরিস্থিতি ভয়ানক রূপ নিয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা শহর বালুরঘাটে। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডই জলমগ্ন। অফিস-আদালত ডুবে রয়েছে জলে। ফলে অঘোষিত ছুটি অফিস-আদালতে। বালুরঘাটের পাশাপাশি কুমারগঞ্জ, কুশমণ্ডি, বংশীহারী ও গঙ্গারামপুর ব্লকের অবস্থা সবথেকে ভয়াবহ। হিলি-গাজল ৫১২৩ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে বইছে জল।
বালুরঘাটে জাতীয় সড়ক কেটে দেওয়ায় বাস চলাচল পুরোপুরি বন্ধ। মহারাজপুরে ব্রিজ ভেঙেছিল আগেই। এবার বালুরঘাট থেকে মালদহ যাওয়ার শেষ সম্বলটুকুও পুনর্ভবার জলের তোড়ে ভেসে গেল। পুনর্ভবা নদীর উপর আমতলি সেতু মাঝবরাবর ভেঙে পড়ে এদিন। ফলে বালুরঘাটের সঙ্গে মালদহের সড়কপথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ শহরও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। কুলিক নদীর জলে বন্দি রায়গঞ্জ শহর। বন্যার কারণে আগামী চারদিন অর্থাৎ শনিবার পর্যন্ত জেলা প্রশাসন সমস্ত স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করে দেয়। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখা হয়।
কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের জল নামতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতি হতে শুরু করেছে। সেই জল নেমে আসায় বন্যা পরিস্থিতি সংকটজনক হয়েছে দুই দিনাজপুর ও মালদহে। তিন জেলার প্রায় সমস্ত নদীই ফুঁসছে, ফলে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপের দিকে যাচ্ছে। মালদহে আবার বাড়তি বিপত্তি বিহারের অতিবৃষ্টি। বিহারের জলই ভাসিয়ে দিচ্ছে এই জেলাকে। অন্যদিকে গঙ্গা ভাঙনেও মালদহের একাংশ বন্যাপ্লাবিত। ফারাক্কা ব্যারাজের ছাড়া জলে প্লাবিত বিস্তীর্ণ এলাকা।