শ্রীনু হত্যাকাণ্ডে বড় মাথা, ঘাটাল ও জামশেদপুর থেকে গ্রেফতার ৭
রেলশহর খড়গপুরের ‘বেতাজ বাদশা’ শ্রীনু নাইডু হত্যাকাণ্ডে সাত জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল ও ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর থেকে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়।
পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ জানুয়ারি : রেলশহর খড়গপুরের 'বেতাজ বাদশা' শ্রীনু নাইডু হত্যাকাণ্ডে সাত জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল ও ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর থেকে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবারই তাদের আদালেত পেশ করা হয়েছে। ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করবে মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। এই খুনের পিছনে রেল মাফিয়ার হাত রয়েছে। রয়েছে আরও বড় মাথা।[পরিকল্পনা করেই খুন শ্রীনু? পরিবারের বয়ানে কি তথ্য উঠে এল!]
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, খড়গপুরকে অশান্ত করতে এই খুনের ঘটনা। এর পিছনে রয়েছে অনেক বড় মাথা। মোট ১১ জন দুষ্কৃতী পরিকল্পিতভাবে সেদিন হামলা চালিয়েছিল পার্টি অফিসে ঢুকে। আটজন এসেছিল টাটাসুমোতে। আর ৩জন ছিল বাইকে। ইতিমধ্যে সাতজনকে গ্রেফতারের পাশাপাশি টাটা সুমোটি আটক করা হয়েছে। বাকি চার জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে।[রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নাকি পুরনো শত্রুতা? শ্রীনু খুনের তদন্তে নেমে সূত্রের খোঁজে পুলিশ]
শ্রীনুকে হত্যার পিছনে ব্যবসায়িক শত্রুতার তত্ত্বই এখন পর্যন্ত জোরদার হয়েছে। তবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। তবে কি বড় মাথা বলতে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিকেই বোঝাচ্ছেন তিনি? পুলিশ সুপার বললেন, এ ব্যাপারে এখনই কিছু বলব না। তাঁর কথায় জল্পনা রয়েই গেল।
রামবাবুকে সরিয়ে খড়গপুরে রাজত্ব কায়েম করেছিলেন শ্রীনু। উত্থান-পর্বে তিনি ছিলেন বিজেপির ছত্রছায়ায়। গত পুরভোটেও তিনি বিজেপি-র হয়েই ভোটযুদ্ধে লড়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী পূজা নাইডু ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজেপি-র টিকিটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
অবশ্য বিধানসভা ভোটের আগেই পদ্ম ছেড়ে দলবদলে ঘাসফুল শিবিরে চলে আসেন শ্রীনু। দলবদল করে পূজাও তৃণমূলে আসেন। এই দলবদলের রাজনীতি খুনের পিছনে থাকতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছিল। তবে এখন শ্রীনুর খুনের পিছনে রেল মাফিয়া-চক্র রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
একাধিক অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন শ্রীনু। সেই কারণে তাঁর একাধিকবার জেল হয়েছে। ছাঁট লোহার ব্যবসা দিয়ে শুরু, তা থেকেই তিনি রামবাবুকে সরিয়ে বনে গেলেন এলাকার ডন। হয়ে উঠলেন খড়গপুরের ত্রাস। তাই সর্বদাই তাঁক প্রাণ হাতে নিয়ে চলতে হত। আগেও বেশ কয়েকবার তাঁর উপর হামলা চলে।
প্রাথমিক তদন্ত পুলিশ মনে করছে, এই খুনের পিছনে ভিনরাজ্যের যোগ রয়েছে। বিহার বা ঝাড়খণ্ডের আততায়ীদের কাজে লাগানো হয়েছিল বলে মনে করছিল পুলিশ। সেইমতো জামশেদপুর যোগও খুঁজে পেল পুলিশ।
বুধবার দুপুর তিনটে নাগাদ, শ্রীনু তৃণমূলের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড পার্টি অফিসে বসেছিলেন। তখনই তিন দুষ্কৃতী একটি মারুতি থেকে নামে। নেমেই বোমা ছুড়তে ছুড়তে ঢুকে পড়ে পার্টি অফিসে। শ্রীনুকে লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়ে তারা। এই বন্দুকবাজ হামলা থেকে বাঁচতে শ্রীনু শৌচগারে লুকিয়ে পড়ে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। সেখানে ঢুকে গুলি করা হয় শ্রীনুকে। শ্রীনর চার সঙ্গীও গুলিবিদ্ধ হন। ভি ধর্মা নামে এক সঙ্গীর ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়।
পুলিশ এই ঘটনায় জখম হওয়া শ্রীনুর সঙ্গীদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করছে, দুষ্কৃতীরা কারা ছিল। তারা কি পরিচিত? তাদের কাউকে কি চিনতে পেরেছিলেন তাঁরা?