বাড়িতেই নরকঙ্কালের চোরা কারবার, হাসপাতাল থেকে আনা হত বেওয়ারিশ লাশ
রমরমিয়ে কঙ্কালের চোরা কারবার চলছে বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে। নরকঙ্কাল বিক্রির এই চক্র ছড়িয়েছে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। আর এই ঘটনাতেও জড়িয়ে অনেক হাসপাতাল ও মর্গ।
বর্ধমান, ২১ মার্চ : রমরমিয়ে কঙ্কালের চোরা কারবার চলছে বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে। নরকঙ্কাল বিক্রির এই চক্র ছড়িয়েছে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। আর এই ঘটনাতেও জড়িয়ে অনেক হাসপাতাল ও মর্গ। বর্ধমানের পূর্বস্থলী থেকে কঙ্কাল উদ্ধারের পর তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন হাসপাতালের মর্গ থেকে মৃতদেহ সংগ্রহ করে কঙ্কালে পরিণত করা হত এখানে। তারপর সেই নরকঙ্কাল পাচার হয়ে যেত বিভিন্ন রাজ্য, এমনকী বাংলাদেশেও।
মাটির নিচে গোপন 'চেম্বার'-এ হত কঙ্কাল প্রসেসিং-এর কাজ। কিছুদিনের মধ্যেই এই নরকঙ্কাল ব্যবসায় বেশ পসার জমিয়ে ফেলেছিলেন দুই ভাই। তবে শেষ রক্ষা হল না। প্রকাশ হয়ে পড়ল বেআইনি এই ব্যবসা। গোপন সূত্রে পুলিশ আধিকারিকরা খবর পেয়েছিলেন নরকঙ্কাল রয়েছে পূর্বস্থলীর নন্দ কলোনির একটি বাড়িতে। সেইমতো মনোজ দাস ও তার দাদা তাপস দাসের বাড়িতে হানা দিয়ে এক-আধটা নয়, ১৮টি নরকঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ।
এত নরকঙ্কাল কী করে এল? তার তদন্তে নেমেই পুলিশ জানতে পারে দুই ভাই নরকঙ্কাল ব্যবসা করতেন। এই নরকঙ্কালের চোরা কারবার চালানো হত দুই পাণ্ডা পলাতক। গ্রেফতার করা হয় তাপসের মা যমুনা পাল, স্ত্রী রাখি পাল, দিদি মিঠু দে ও এক কর্মচারী নকুল চৌধুরীকে। দুইটি বাড়িই সিল করে দেওয়া হয়েছে। ধৃত চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যে তথ্য উঠে আসে তাতে চক্ষু চরকগাছ পুলিশের।
এই নরকঙ্কালকাণ্ডের তদন্তে নেমে সাত বছর আগের একটি ঘটনার কথা উঠে আসে। পূর্বস্থলীরই যুক্তেশ্বরপুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ২০টি নরকঙ্কাল। তখন মুক্তি বিশ্বাস নামে এক নরকঙ্কাল ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর মৃত্যুর পর যে সেই কারবারে হাত পাকিয়েছে তাপস-মনোজ দুই ভাই, তা জানতে পারেনি পুলিশ।
তাপস আর মনোজ কাপড় ব্যবসা ছেড়ে নরকঙ্কালের ব্যবসায় পসার জমায়। এই কাজে তারা নিয়োগ করে নকুল চৌধুরী নামে এক ব্যক্তিকে। তার মূলত কাজ ছিল বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গ থেকে বেওয়ারিশ লাশ সংগ্রহ করে আনা। ভাগীরথীর বলাডাঙা ঘাট দিয়েই চলত মৃতদেহ আদানপ্রদানের কাজ। তারপর মৃতদেহগুলি এনে মাটির নিচের চেম্বারে প্রসেসিং করে কঙ্কালে পরিণত করা হত। মনোজকে জেরা করে এইসব তথ্য পায় পুলিশ। এখন কঙ্কাল চোরা কারবারের মূল দুই পাণ্ডা তাপস ও মনোজের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।