বহরমপুরও হাতছাড়া হতে চলেছে, অধীর সাম্রাজ্যের পতন সুনিশ্চিত
মুর্শিদাবাদ, ১৫ সেপ্টেম্বর : অধীর সাম্রাজ্যের পতন অনিবার্য হতে চলেছে। এবার শেষ সম্বল বহরমপুর পুরসভাও হাতছাড়া হওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। এক এক করে নিশ্চিহ্ন সব ক্ষমতাই। তৃণমূলের থাবায় এবার নিজের গড়ও বেদখল হতে বসেছে। মুর্শিদাবাদের মুকুটহীন সম্রাট এখন নিজভূমেই পরবাসী। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ হাতছাড়া হওয়ার পরই আভাস মিলেছিল বহরমপুর পুরসভার দখলও আর থাকবে না কংগ্রেসের হাতে।
তবু আশা বলতে এটুকুই ছিল যে, বহরমপুর একেবারে অধীরের খাসতালুক। এখানে নিশ্চয়ই দাঁত ফোটাতে পারবে না তৃণমূল। কিন্তু খেলা যে জারি রেখেইছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরুণ-তুর্কি তুরুপের তাস শুভেন্দু অধিকারী। এক এক করে সব শক্তিই হরণ করে নিয়েছিলেন তিনি। এবার কংগ্রেসের সব থেকে বড় আশ্রয়টুকুও যেতে বসেছে। খুব শীঘ্রই বহরমপুর পুরসভার পুরপ্রধান-সহ ১৫ জন কাউন্সিলর যোগ দিতে চলেছেন তৃণমূলে। কংগ্রেস তাই এই পুরসভায় শক্তি হারিয়ে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে। অচিরেই অনাস্থায় হেরে খোয়াতে হবে বহরমপুরের তাজ।
২৮ আসনবিশিষ্ট বহরমপুর পুরসভায় একটি আসনও ছিল না তৃণমূল কংগ্রেসের। সেখানে ১৫ জন কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিলে তারাই হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তখন তৃণমূল 'সংখ্যালঘু' পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে পারবে। তারপরই ভোটাভুটি হলে পুরসভা কংগ্রেসের হাতছাড়া হওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। বৃহস্পতিবারই দলত্যাগী কাউন্সিলরদের তৃণমূলে যোগ-পর্ব সুসম্পন্ন করে ফেলতে চাইছে দল। যদি কোনওভাবে এদিন না হয়, তবে শুক্রবারই তৃণমূল ভবনে গিয়ে দলে যোগ দেবেন তাঁরা। এদিনই কংগ্রেসের দলত্যাগী কাউন্সিলররা কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। সঙ্গে রয়েছেন মুর্শিদাবাদের তৃণমূল নেতা সৌমিক হোসেন।
এর আগে একইভাবে তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের অধিকাংশ সদস্যকে ভাঙিয়ে এনেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী ব্রিগেড। তিন দফায় কংগ্রেস ও বাম সদস্যদের তৃণমূলে এনেছেন। এই মুহূর্তে ৩৮ জন সদস্য নিয়ে ৭০ আসনবিশিষ্ট জেলা পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ তৃণমূল। যে দল ২০১৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে মাত্র একটি জেলা পরিষদ আসনে জিততে সমর্থ হয়েছিল, দ্বিতীয় বার রাজ্যশাসনে এসে চারমাসের মধ্যে জেলা পরিষদের ক্ষমতা দখল করতে চলেছে।
ইতিমধ্যে অনাস্থাও এনেছেন। ১৫ দিনের মধ্যেই মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে লাগু হবে তৃণমূলী শাসন। একইভাবে রাজ্যের অন্যান্য জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি, পুরসভাও নিজেদের দখলে নিয়ে আসছে তৃণমূল। কংগ্রেসর কোমর আগেই ভেঙে গিয়েছিল রাজ্যে। বহরমপুর হাতছাড়া হলে হৃদয়টুকুও দু'টুকরো হয়ে যাবে জাতীয় দল কংগ্রেসের।
অধীরবাবু এই ধরনের ক্ষমতাদখলকে গণতন্ত্রের কালো দিক বলে বর্ণনা করেছেন। বলেছেন, যাঁরা যেতে চাইছেন তাঁরা যেতে পারেন। আসলে ওঁরা সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছেন। তৃণমূলের টাকার অফার অনেকের মাথা ঘুরিয়ে দিচ্ছে। যাঁরা যাচ্ছে যাক, তাতে দলের কোনও ক্ষতি হবে না। দলের কর্মীরাই আসল, তাঁরাই প্রকৃত শক্তি। যদিও অধীরবাবুর এই সদস্য কেনার তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নযজ্ঞে সামিল হতেই রাজ্যজুড়ে বিরোধী সদস্যরা তৃণমূলের ছত্রছায়ায় আসছেন। তাঁরাও এই উন্নয়নের শরিক হতে চান।