‘মারণফাঁদ’ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে, ফের দু্র্ঘটনায় মৃত ১, সমস্যা সমাধানে কী উদ্যোগ প্রশাসনের
বেপরোয়া গতি, আলোর অভাব, বিপজ্জনক বাঁক, লেন ভাঙা, ওভারটেক, যত্রতত্র পার্কিং, ইমারতি দ্রব্যে সংকীর্ণ রাস্তা ও মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উঠে আসে যৌথ পরিদর্শনে।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা যেন কিছুতেই থামছে না। একটার পর একটা দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও আহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে। ফের একবার দুর্ঘটনার বলি হলেন ওক মহিলা।
কিছুদিন আগে এই অভিশপ্ত রাস্তায় মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তৃণমূল কংগ্রেসের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সঙ্গীত শিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। অভিষেক কোনওভাবে রক্ষা পেলেও, শেষ রক্ষা হয়নি কালিকাপ্রসাদের। এরপরও একাধিক ছোট-বড় দুর্ঘটনায় খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে।
ফের আরও এক দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকল এই দুর্ঘটনাপ্রবণ এক্সপ্রেসওয়ে। রাজগীর থেকে সপরিবারের বাড়ি ফেরার পথে পথ দুর্ঘটনা কেড়েছে এক মহিলার প্রাণ। পরিবারের চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে বারবার এই দুর্ঘটনার কারণ জানতে সম্প্রতি অনুসন্ধানে নেমেছিল হুগলি জেলা পুলিশ। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে নিয়েই হুগলির গুড়াপ থেকে ডানকুনি পর্যন্ত ২৫টি জায়গাকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ঠিক কী কী কারণে এই জায়গাগুলিতে দুর্ঘটনা খতিয়ে দেখে একটা রিপোর্ট তৈরিও করা হয়েছিল।
সেইমতো দুর্ঘটনা রুখতে নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু পরিকল্পনাগুলির রূপায়ণ হয়নি এখনও। হুগলি জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেপরোয়া গতি, আলোর অভাব, বিপজ্জনক বাঁক, লেন ভাঙা, ওভারটেকই এই সমস্ত দুর্ঘটনার কারণ। এছাড়া যত্রতত্র পার্কিং ও ইমারতি দ্রব্য পড়ে থাকার বিষয়টিও উঠে আসে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে। আরও ভয়ঙ্কর একটি কারণ মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো। তাই নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ, পূর্ত দফতর ও জেলা পুলিশ সম্মিলিতভাবে সমাধানের উদ্যোগ নিলেও, এখনও নজরদারি বাড়ানোর কাজ শুরু হয়নি। সচেতন করতে রাস্তার দু'ধারে বোর্ড লাগানোর বিষয়টিও ঝুলে রয়েছে। মদ্যপ চালকদের ধরতে অভিযানও ধারাবাহিকভাবে হচ্ছে না। সেগুলি দ্রুত রূপায়ণের উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছে হুগলি জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন জানান, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। সেগুলি দ্রুত রূপায়ণের চেষ্টা করা হচ্ছে। তা হয়ে গেলে অনেকাংশে কমবে দুর্ঘটনা।
উল্লেখ্য, এদিন ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ সিঙ্গুরের রতনপুর মোড়ের কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে একটি দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মারে মারুতি সুইফট। গতি বেশি থাকায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় গাড়িটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক মহিলার। এই ঘটনায় গুরুতর জখম হন মিতাদেবীর স্বামী পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি তিনি। গুরুতর জখম হয়েছেন পার্থবাবুর বাবা-মা ও মেয়েও। আহতদের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।