আরও এক মিতা মণ্ডল পণের বলি, সালিশিসভা বসিয়ে মীমাংসার চেষ্টা, পরে গ্রেফতার স্বামী-শ্বশুর
আরও এক মিতা মণ্ডল পণের বলি হলেন। হাওড়ার ফুলেশ্বরের পর দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং। স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির সদস্যদের লালসায় অস্বাভাবিক মৃত্যু হল তাঁর। তাঁকে বিষ খাইয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
ক্যানিং, ২১ অক্টোবর : আরও এক মিতা মণ্ডল পণের বলি হলেন। হাওড়ার ফুলেশ্বরের পর দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং। স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির সদস্যদের লালসায় অস্বাভাবিক মৃত্যু হল তাঁর। তাঁকে বিষ খাইয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা সালিশি সভা বসিয়ে মীমাংসায় বাধ্য করা হয় মিতার বাপের বাড়ির সদস্যদের। পঞ্চায়েত সদস্য গোপাল মণ্ডলের মধ্যস্থতায় সালিশিসভায় বসা হয় ক্যানিং থানায়।
বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হলে স্বামী রঞ্জিত হালদার কেন থানায় আত্মসমর্পণ করল? তারপর কেনই বা থানায় সালিশি সভা বসিয়ে দুই পরিবারকে নিয়ে মীমংসা করা হল? তারপর ছেড়ে দেওয়া হল আত্মসমর্পণ করা স্বামীকে। অভিযোগ মীমাংসাপত্রে বাপের বাড়ির সদস্যদের পক্ষ থেকে লিখিয়ে নেওয়া হয়, তারা যেন কোনও অভিযোগ না করেন। মিতার বাপের বাড়ির লোক এই মর্মে কোনও অভিযোগ করেনি থানায়। শেষপর্যন্ত মিতা যে বাড়িতে কাজ করতেন, সেই বাড়ির মালিক সম্পূর্ণা মজুমদারের করা অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত এগোয়।গ্রেফতার করা হয় স্বামী-শ্বশুরকে।
তিন বছর আগে মিতা মণ্ডলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ক্যানিংয়ের বাসিন্দা রঞ্জিত হালদারের। বিয়ের পর থেকেই পণের দাবিতে তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হত। বাপের বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে দেওয়া হত না। দাদাদের ফোন করতে পারতেন না তিনি। মিতা তাঁর দাদাদের এ কথা জানিয়েওছিলেন। তারপর দাদারাই তাঁকে একটি ফোন কিনে দেন। সেই ফোনটিও কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
এরই মধ্যে রবিবার বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয় মিতার। সেই খবরটুকুও বাপের বাড়িতে দেওয়া হয়নি। পাড়ার লোকের মাধ্যমে খবর পেয়ে মিতার শ্বশুর বাড়িতে যান তাঁর দাদারা। সেখানে গিয়েও দেখেন তালা বন্ধ, কেউ কোথাও নেই। হাসপাতালে গিয়েও খোঁজ মেলেনি মিতার। এরই মধ্যে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে স্বামী রঞ্জিত হালদার। পরে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য গোপাল মণ্ডলের হস্তক্ষেপে ছাড়া পেয়ে যায় স্বামী।
মিতার
দাদাদের
অভিযোগ,
তাঁদের
বোনকে
বিষ
খাইয়ে
খুন
করা
হয়েছে।
কিন্তু
তাঁদেরকে
থানায়
অভিযোগ
করতে
দেওয়া
হয়নি।
সালিশিসভা
বসিয়ে
তাঁদের
লিখিয়ে
নেওয়া
হয়,
বোনের
মৃত্যুতে
তাঁদের
কোনও
অভিযোগ
নেই।
কিন্তু
নাছোড়বান্দা
মিতা
যাঁর
বাড়িতে
কাজ
করতেন,
সেই
সম্পূর্ণা
মজুমদার।
মিতার
মৃত্যু
যে
স্বাভাবিক
নয়,
মিতা
যে
আত্মহত্যা
করেনি,
তা
ভালোই
বুঝতে
পারেন
তিনি।
তিনিই উদ্যোগ নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁকেও চাপ দেওয়া হয়, মিতার দাদারা অভিযোগ তুলে নিয়েছে, আপনি কেন তুলছেন না। তিনি ভয়ে পিছিয়ে আসেননি। বরং মিতার দাদাদের বোঝান, মিতাকে খুন করা হয়েছে, অভিযোগ দায়ের করতে। শেষপর্যন্ত তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে স্বামী-শ্বশুরকে গ্রেফতার করা হয়।
তবে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করা সত্ত্বেও কেন তাঁকে সালিশসভা বসিয়ে মীমাংসা করে ছেড়ে দেওয়া হল। সম্পূর্ণাদেবীর অভিযোগ, থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন যখন, তখন তো নিশ্চয়ই কোনও অপরাধবোধ ছিল। কী সেই অপরাধ? তা কেন জানতে চেষ্টা করল না পুলিশ? সম্পূর্ণাদেবী যেটা বুঝতে পারছেন, এই সরল সত্যটা কেন বুঝলেন না পুলিশকর্তারা? আর বিষ খেলে কেন মীমাংসার প্রশ্ন, এটাও তো বোঝা উচিত পুলিশের?