মোড়লের মাতব্বরি, সালিশিসভায় ডাইনি অপবাদ দিয়ে গ্রামছাড়া করা হল বৃদ্ধাকে
সালিশিসভা বসিয়ে ডাইনি অপবাদ দিয়ে গ্রামছাড়া করা হল এক বৃদ্ধাকে। মাথার উপর কোনও ছাদ নেই, গাছ তলাই এখন আশ্রয়। গ্রামের মোড়লদের নিদানের পর আতঙ্কে দিন কাটছে বৃদ্ধার।
বর্ধমান, ২৪ ফেব্রুয়ারি : সালিশিসভা বসিয়ে ডাইনি অপবাদ দিয়ে গ্রামছাড়া করা হল এক বৃদ্ধাকে। মাথার উপর কোনও ছাদ নেই, গাছ তলাই এখন আশ্রয়। গ্রামের মোড়লদের নিদানের পর আতঙ্কে দিন কাটছে বৃদ্ধার। বর্ধমানের আউশগ্রামের এই ঘটনা ফের একবার মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে বলে নিন্দার ঝড় উঠেছে ওয়াকিবহাল মহলে।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আউশগ্রামে শুখাডাঙা গ্রামে সন্ন্যাসী হাঁসদার মেয়ের মৃত্যু হয়। বছর ১৭-র ওই কিশোরীর মৃত্যুর পিছনে আঙুল ওঠে ওই বৃদ্ধার দিক। বৃদ্ধা ওই গ্রামেই মেয়ের কাছে থাকতেন। মেয়ের মৃত্যুর পর সন্ন্যাসী ও তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মী হাঁসদা গ্রামের মোড়লের কাছে অভিযোগ জানান বৃদ্ধার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তাঁদের মেয়ের মৃত্যু হয়েছে ওই বৃদ্ধার কু-দৃষ্টিতে।
এরপরই গ্রামে সালিশি সভা বসানো হয়। সেই সালিশি সভায় নিদান দেওয়া হয় ওই বৃদ্ধাকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে। তাঁর বিরুদ্ধে ডাইনি অপবাদও ওঠে এই সালিশি সভায়। যদিও গ্রামের মোড়র মিহির সোরেন গ্রামত্যাগের নিদানের কথা স্বীকার করলেও, ডাইনি অপবাদের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
অভিযোগ, কিশোরীটি অসুস্থ হয়ে পড়ার তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল গ্রামরেই এক ওঝার কাছে। সেই ওঝাই বলেন, গ্রামে ডাইনি রয়েছে। তার কু-দৃষ্টি পড়েছে ওই মেয়ের উপর। তার জেরেই ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ছে মেয়েটি। ডাইনিকে গ্রাম থেকে না তাড়ালে নিস্তার নেই।
এরপরই ২০ ফেব্রুয়ারি সালিশি সভা বসে। গ্রামের মোড়ল তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ হাজার টাকা দরিমানা দিতে নিদান দেন। বৃদ্ধার উপর টাকা দিতে চাপ সৃষ্টি করা হয়। টাকা দিতে অপারগ হওয়ায় একঘরে করে দেওয়া হয়েছে ওই বৃদ্ধাকে। গ্রামের মোড়ল বলেন, ওকে ডাইনি অপবাদ দেওয়া হয়নি। শাস্তি মানতে না চাওয়ায় একঘরে করে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে। তবে কোনও পক্ষই কোনও অভিযোগ করেনি পুলিশে।