বড়সড় জাল নোট চক্রের হদিশ খাস কলকাতায়, ভারতের পাশাপাশি ছাপানো হত তুরস্ক-জিম্বাবোয়ের নোটও
কলকাতা, ৩ মার্চ : খাস কলকাতার মধ্যেই চলত জাল নোটের বড়সড় চক্র। আর সেই চক্রেরই হদিশ পেল স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফ। ১০ কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার করেছে এসটিএফ। এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ১ জনকে।
সূত্রের তরফে খবর পেয়ে তল্লাসি অভিযান চালায় পুলিশ। সেই অভিযানে পুলিশের সামনে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। মানিকতলার একটি ৩ তলা বাড়িতে জাল নোট ছাপানো হত। সেই নোট পাঠিয়ে দেওয়া হত ডোমজুরের গুদামে। ডোমজুরের ওই গুদাম থেকে জাল নোট, নোট তৈরি করার সামগ্রী এবং স্ট্যাম্প পেপার পেয়েছে পুলিশ।
তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল এই গুদামটি থেকে ভারত ছাড়াও তুরস্ক ও জিম্বাবোয়েরও জাল নোট উদ্ধার হয়েছে। তদন্তকারী আধিকারিকদেক মতে যা নজিরবিহীন। কলকাতায় বসে এত কোটি কোটি টাকার জালনোট চক্র কলকাতার বুকে চালানোর ঘটনা বিগত কয়েক বছরে শোনা যায়নি।
তল্লাশি অভিযানের সূত্রপাত
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বৌবাজার এলাকা থেকে চন্দ্রশেখর জয়সওয়াল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জেরা করতে গিয়ে ডোমজুরের এই কারখানার হদিশ মেলে। এর পরে ওই গুদামে তল্লাসি অভিযান চালিয়ে কোটি কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার করে পুলিশ। নির্দিষ্টভাবে কী পরিমাণ জাল নোট আছে তা এখনই বলা না গেলেও পুলিশের বক্তব্য প্রায় ১০ কোটি টাকার জালনোট উদ্ধার করেছে পুলিশ।
জাল নোটের পাশাপাশি কয়েক বস্তা টাকার গুঁড়োও ওই গুদাম থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের অনুমান রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঠিকাদারদের একাংশ এই জাল চক্রের সঙ্গে যুক্ত। এই টাকার গুড়ো তাঁদের থেকেই পেয়েছে চক্রীরা। এবিষয়ে এসটিএফ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছে।
জাল নোট চক্রের কেন্দ্র হয়ে উঠছে পশ্চিমবঙ্গ
খাগড়াগড় কাণ্ডের সময় দেখা গিয়েছে কীভাবে পশ্চিমবঙ্গে মডিউল গড়ে বাংলাদেশী সন্ত্রাসবাদীরা পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্র গড়ে তুলেছিল। এনআইএর তদন্তে উঠে এসেছিল পাকিস্তানে যে জাল নোটা ছাপা হয় তা করাচি বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ পাঠানো হত। বাংলাদেশে পৌছনোর পর সেই নোট পশ্চিমবঙ্গের মালদহে পাঠিয়ে দেওয়া হত। তারপর তা সেখান থেকে ভারতের কোনায় কোনায় পৌছে দেওয়া হত।
ডোমজুরের গুদামে যে কোটি কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ তা খুব একটা চমকপ্রদ নয়। কারণ পশ্চিমবঙ্গে জাল নোটের যে বাজার রয়েছে তা নতুন কথা নয়। তবে যে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি নিজের বাড়িতে বসেই বহুল পরিমাণে জাল নোট ছাপাতেন। শুধু ভারতের নয়, এদেশে বসে জিম্বাবোয়ে ও তুরস্কের জাল নোটও ছাপতেন তিনি।
জাল নোট চক্রের পিছনে জঙ্গি কার্যকলাপ
ঝুঁকি আছে জেনেও কেন নিজের বাড়িতে বসেই জাল নোট ছাপাতেন চন্দ্রশেখর তা নিয়ে দ্বিধায় এসটিএফ। বিষয়টি এনআইএ-র কাছে জানানো হয়েছে। এই ঘটনায় কোনও জঙ্গি সংগঠনের মদত, বা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের যোগ আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে এসটিএফ।
এসটিএফের অনুমান এই বিশাল জাল নোটের চক্র একজনের পক্ষে চালানো সম্ভব নয়, শহর জুড়ে এই চক্রের জাল। চন্দ্রশেখরকে জেরা করেই একে একে সেই জালগুলি ছিঁড়তে হবে। কেনই বা এদেশে তুরস্ক ও জিম্বাবোয়ের জাল নোট ছাপা হত তা জানতেও তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।