এবার জিম-সিম করে বডি-সডি বানাবেন বিধায়করা! বিধানসভার অন্দরে হাসির রোল
এতদিন শুধু বাকযুদ্ধ দেখা গিয়েছে বিধানসভায়। এবার বাকযুদ্ধ করে ক্লান্ত হলে জিমে গিয়ে কসরত করে শরীর ও মন চাঙ্গা করে আসতে পারবেন। সেই ব্যবস্থাই হয়েছে রাজ্য বিধানসভায়।
আলোচনা, বিতর্ক সবই হবে, সঙ্গে চলবে কসরতও। সেই ব্যবস্থাই হয়েছে বিধানসভায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এবার চালু হল জিম। তৃণমূল সরকারের বিশেষ এই উদ্যোগ বিধায়কদের নিয়মিত শরীরচর্চা করানোর জন্য। কিন্তু সেই জিম নিয়েই রসিকতা করতে ছাড়ছেন না বিরোধী দলের বিধায়করা। অনেকে তো এই জিমকে অপব্যয় বলেই মনে করেছেন।
বৃহস্পতিবার বিধানসভার সচিবালয়ের তরফে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে লেখা রয়েছে- বিধানসভার ৪৭ নম্বর কক্ষে বিধায়কদের জন্য জিমন্যাশিয়ামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইচ্ছুক বিধায়করা জিমে এসে শরীর চর্চা করতে পারবেন। বিধানসভার কর্মীরাও আসতে পারেন এই জিমে। এমনকী বিধানসভার প্রতিটি কক্ষের সামনে বিজ্ঞপ্তিটি সেঁটে দেওয়াও হয়েছে।
বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বিধায়ক আবাসনের একটি জিমকে এখানে সরিয়ে আনা হয়েছে। এই জিমে থাকছে ট্রেড মিল, অটোমেটিক মাসাজ মেশিন, শরীর চর্চার অন্যান্য যন্ত্রও। বিধানসভায় জিম চালু করে বিধায়কদের শরীরচর্চা নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ। শরীর চর্চা করলে শরীর ও মন- দুই-ই ভালো থাকে।
তবে এই জিম চালু নিয়ে শাসকদলের বিধায়কদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ দেখা গেলেও, বিরোধীরা বিধানসভায় জিম নিয়ে রীতিমতো রসিকতা করলেন। বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান তো বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ। আর সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী কিংবা তন্ময় ভট্টাচার্য তো কটাক্ষ করলেন রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে। বিজেপি বিধায়ক দিলীপ ঘোষও মজা করতে ছাড়লেন না।
ক'দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের কক্ষে গিয়ে বিরোধী দলনেতা কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নানের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। রসিকতা করে মেদ কমানোর পরামর্শ দেন। আর তারপরেই বিধানসভায় চালু হল জিম। মান্নান সাহেবকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিধানসভা মানুষের কথা বলার জায়গা। আমরা চাই মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিক সরকার। আমরা বিধায়করা এখানে আসি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করতে। তাই জিম চালু হল, কি হল না, তা নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই।
বাম পরিষদীয় দলনেতা সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেন, আমরা বিধায়করা এখানে আসি জনতার জন্য লড়াই করতে। ওইসব জিম নিয়ে আমরা কিছু ভাবছি না। বিধায়করা অধিবেশনে যোগ দিতেই মূলত এখানে আসেন। তাঁরা কি এবার অধিবেশনে যোগ না দিয়ে জিম করবেন?
আর এক সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, 'আমি ব্যক্তিগতভাবে কখন জিম করার ব্যাপারে অভ্যস্ত নই। ভালোই হয়েছে, অনেক বিধায়কের দরকার। বিশেষ করে অনেক শাসক দলের বিধায়কের যেভাবে মেদবৃদ্ধি হচ্ছে, তাতে জিম না করলে খুবই সমস্যার। কিন্তু সময় পাবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই যায়।
তিনি বলেন, আমার মনে হয়, বাস্তবতই এটা অপব্যয় হয়েছে। এমনিতেই বিধায়করা অনেক সুবিধা পান, তারপর এই জিমের কী প্রয়োজন? এসব না করে যদি বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, আইসিডিএসের কর্মীদের ভাতা বৃদ্ধির দিকে নজর দিত সরকার, অনেক ভালো হতো।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আবার নিয়মিত শরীর চর্চায় অভ্যস্ত। এদিন বাংলা ওয়ানইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার তিনি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সামনে বিষয়টি নিয়ে বেশ মজাই করেন। রসিকতার ঢঙে তিনি বলেন, 'লালবাজার অভিযানে মার খেলে তো মাসাজ করাতে আসতে হবে এই জিমে। জিমে যাবো, সঙ্গে পার্থদাকেও নিয়ে যাবো।'
বিরোধী দলের বেশিরভাগ বিধায়করা এই জিম নিয়ে হাসিমস্করাই করলেন। কিন্তু শাসকদলের বিধায়করা স্বাগত জানালেন এই উদ্যোগের। শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের খ্যাতি রয়েছে একজন বক্সার হিসেবে। তিনি মাঝেমধ্যেই তরুণ বিধায়কদের পরামর্শ দেন শরীরচর্চা করতে। এবার বিধানসভাতেই সেই ব্যবস্থা হওয়ায় স্বাগত জানান তৃণমূলের প্রবীণ এই বিধায়ক। তিনি বলেন, বিধায়ক হস্টেলে জিম থাকলেও সেখানে অনেক বিধায়কই থাকেন না। ফলে ইচ্ছা থাকলেও জিমে শরীর চর্চা করতে পারেন না। এবার থেকে তাঁরা শরীর চর্চা করতে পারেবন বিধানসভাতেই।