শিশু পাচার চক্রে আন্তর্জাতিক যোগ, তিন বছরে বিক্রি হয়েছে ৮০টি শিশু!
বাদুড়িয়ায় শিশু পাচার চক্রে আন্তর্জাতিক যোগ পেল সিআইডি। শুধু আন্তঃরাজ্য নয়, বিদেশেও এই র্যাকেট কাজ করত বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।
উত্তর ২৪ পরগনা, ২৩ নভেম্বর : বাদুড়িয়ায় শিশু পাচার চক্রে আন্তর্জাতিক যোগ পেল সিআইডি। শুধু আন্তঃরাজ্য নয়, বিদেশেও এই র্যাকেট কাজ করত বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিন বছরের ব্যবসায় ৭০ থেকে ৮০টি শিশু বিক্রি হয়েছে এই হাসপাতাল থেকে। জড়িত রয়েছেন নামী চিকিৎসকরাও।
সোমবার রাতে পুলিশ ও সিআইডি-র যৌথ অভিযান চালিয়ে শিশু পাচার চক্রের মূল পাণ্ডা আসাদুজ্জামান ও নাজমা-সহ আট জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে সিআইডি। বিস্কুটের বাক্সে করে সদ্যোজাতকে পাচার করে দিত তাঁরা। চড়া দাম দিলেই উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার নার্সিংহোম থেকে মিলত শিশু। এই নার্সিংহোম থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে নাজমার ওষুধ দোকানে বসেই চূড়ান্ত হত ডিল, তারপর শিশুর আসল পরিচয় চিরদিনের মতো হারিয়ে যেত।
এই ঘটনার তদন্তে নেমে ধৃতদের জেরা করে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে তদন্তকারীদের হাতে। নাম জড়িয়েছে চিকিৎসক থেকে শুরু করে উকিল-মোক্তারদেরও। প্রথমে চিকিৎসকদের সহযোগিতা নিয়ে শিশুটিকে মৃত বলে চালানো হত। তারপর ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়া হয়। শিশুর নতুন বাবা-মা যাতে কোনও আইনি সমস্যায় না পড়েন, সেজন্য দত্তকের ভুয়ো নথিও তৈরি করে দিত এই চক্র। সেই কাজ আদালতের ল ক্লার্ক ও তার সহযোগী।
অন্যদিকে অভিভাবকদের বলা হত তাঁরা মৃত সন্তান প্রসব করেছেন। গণ্ডগোলের চেষ্টা করলে ক্ষিতপূরণ হিসেবে দেওয়া হত পাঁচ হাজার টাকা। এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হত ক্রেতাদের সঙ্গে। তাদের মাধ্যমে ভিন রাজ্য ও বিদেশেও শিশু পাচার হয়ে যেত। এমনকী আমেরিকার এক দম্পতিও শিশু কিনে নিয়ে গিয়েছে এই চক্রের হাত থেকে। তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে সিআইডি।
একেবারে সাজানো গোছানো একটা পাচার চক্র। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা দায়িত্ব। চিকিৎসক, হাসপাতালকর্মী থেকে শুরু করে দালাল, উকিল যে যার দায়িত্ব পালন করল। সঠিক সময়ে প্রাপ্য অর্থ চলে আসত যে যার পকেটে।
হাতুড়ে চিকিৎসক আমিরুল বিশ্বাসের দায়িত্ব ছিল সদ্যোজাতের দেখভাল করা। নার্সিংহোমের আয়া উৎপলা ব্যপারী ও সুবোধ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট নামে এনজিও-র কর্মী সত্যজিৎ সিনহা ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। ল ক্লার্ক প্রভাস সরকার ও তাঁর সহযোগী ঝন্টু বিশ্বাস শিশুদের দত্তকের ভুয়ো নথি তৈরি করত। এই চক্রে দুই চিকিৎসক তপন দাস ও আর গুপ্তার খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। আরজিকর হাসপাতালের এক প্রাক্তন চিকিৎসকও এই চক্রে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁকেও খুঁজছে সিআইডি।