মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সন্ধ্যা,দু’দফা জেরায় পুলিশকে কী বললেন বিক্রম?
পুলিশ বিক্রমের কাছে সনিকা মৃত্যু তদন্তে বেশ কিছু মিসিং লিঙ্কের সন্ধান চাইছিলেন। কিন্তু, বিক্রম সেই মিসিং লিঙ্কগুলো সেভাবে সরবারহ করছিলেন না বলে পুলিশের দাবি।
জেরার শুরুতে বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের স্বীকার করতে চাননি তিনি মদ্যপান করেছিলেন ২৮ এপ্রিল রাতের পার্টিতে। পুলিশ বিক্রমের কাছে সনিকা মৃত্যু তদন্তে বেশ কিছু মিসিং লিঙ্কের সন্ধান চাইছিল। কিন্তু, বিক্রম সেই মিসিং লিঙ্কগুলো সেভাবে সরবরাহ করছিলেন না বলে পুলিশের দাবি। এই সময়ই আসল তাসটি ফেলেন সনিকা মৃত্যু তদন্তে গঠিত 'সিট'। তাঁরা বিক্রমের কাছে বন্ধু অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের বয়ানের রেকর্ড তুলে ধরেন।
এরপরই জেরার মুখে বিক্রম স্বীকার করে নেন, তিনি মদ্যপান করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু মত্ত ছিলেন না। তিনি সম্পূর্ণই সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিলেন। এবং গাড়ি চালানোর মতো অবস্থাতেই ছিলেন। মোট কথা তিনি স্পষ্ট করে পুলিশকে জানিয়ে দেন, মদ খাওয়ার কারণে বেসামাল হয়ে এই দুর্ঘটনা নয়।
তবে কি দুর্ঘটনার সময় অন্য কোনও গাড়ি সামনে চলে এসেছিল? অন্য গাড়ি চলে এসেছিল কি না চিনি খেয়াল করেননি বলে জানান পুলিশকে। তাহলে দুর্ঘটনা ঘটল কীভাবে? তাহলে কী গাড়ির গতি অত্যন্ত বেশি ছিল? কত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন?
বিক্রম জানান, গাড়ির গতি ৬০-৭০-এর আশেপাশে ছিল। ১০০-র উপর কখনই গাড়ির গতি ওঠেনি। কিন্তু ৬০-৭০ কিলোমিটার গতিতে থাকলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে কি? তখন বিক্রম জানান, গাড়ির চাকা ট্রাম লাইনে পিছলে যাওয়াতেই বিপত্তি ঘটে। ব্রেক ফেলও করেনি। ট্রাম লাইনে চাকা পিছলে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মারে গাড়ি। তারপর উল্টে যায়।
এরপর বুধবার দুপুরে পুলিশি জেরার মুখে অভিনেতা বিক্রম একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য জানান। তিনি পুলিশকে জানান, গত চারমাস ধরে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল সনিকার। অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্য দীর্ঘদিনের বয়ফ্রেন্ড ছিলেন সনিকার। দু'জনের বিয়ের কথাও পাকা হয়ে গিয়েছিল। আগামী নভেম্বরে তাদের বিয়ের কথা। তাহলে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হল কীভাবে? এ প্রসঙ্গে বিক্রম সনিকার পাঠানো কিছু টেক্সট মেসেজ ও কিছু হোয়াটস অ্যাপ মেসেজ দেখান পুলিশকে। তার উত্তরে বিক্রম কী লেখেন, তাও দেখান তদন্তকারীদের।
এই মর্মে পুলিশ মনে করছে, কোনও কারণে সাহেবের সঙ্গে সনিকার সম্পর্কে শীতলতা তৈরি হয়েছিল। যার ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন বিক্রম। এই সম্পর্কের শীতলতা, বিয়ে, তারপর মুম্বই সেটল, এইসব নিয়ে উভয়ের মধ্যে বচসা বাধে। মতানৈক্য গড়ায় হাতাহাতিতেও। সেই কারণে রাত ২.১৫ নাগাদ তাঁর ফ্ল্যাটের কাছে গিয়েও ফ্ল্যাটে না ঢুকে গাড়িতে বসেছিলেন। কসবার রাজডাঙা মেন রোডে প্রায় ৩৫ মিনিট গাড়িতে বসে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। তারপরই সনিকাকে বাড়ি পৌঁছতে যাওয়ার পথেই দুর্ঘটনা।
এদিন বিক্রমকে ছেড়ে দেওয়া হলেও, তদন্তকারীরা ফের জেরা করতে পারে তাঁকে। যে কোনও দিন তাঁকে তলব করা হতে পারে। এরই মধ্যে অন্যান্য বন্ধুদের জেরা করবে পুলিশ। সেই বয়ান মেলানোও হবে।