ভোট রাজনীতি ? পুরভোটের আগে জমি বিল নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতে মমতা
পুরভোটের আগে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতে যাওয়ার নয়া কৌশল নিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের আনা জমি অধিগ্রহণ বিলের বিরোধিতা করে পথে নেমে প্রতিবাদের রাস্তা গ্রহণ করলেন তিনি।
আগামী ৮ এপ্রিল মৌলালি থেকে গান্ধীমূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত ধিক্কার মিছিল করবে তৃণমূল কংগ্রেস। যার নেতৃত্ব দেবেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া একইদিনে বিভিন্ন জেলার ব্লকে-ব্লকে প্রতিবাদ সংগঠিত করার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কালো ব্যাজ পরে ও মুখে কালো কাপড় বেঁধে পথে নামতে কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মমতার দ্বিচারিতা!
এর আগে কয়লা ও খনি বিলে সরাসরি সমর্থন জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিমা বিলে প্রথমে বিরোধিতার কথা বলেও পরে রাজ্যসভা থেকে ওয়াক আউটের সিদ্ধান্ত নেন তৃণমূল সাংসদরা। তবে জমি বিলের বিরোধিতার ক্ষেত্রে এত তৎপরতা কেন তৃণমূলের? ভোটের আগে তৃণমূলের এই সিদ্ধান্তেই হঠাৎ করে উঠতে শুরু করেছে নানা প্রশ্ন। কারণ কয়েকদিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে রাজ্যের জন্য একাধিক আবদার করে আসেন মুখ্শমন্ত্রী। তাই বিরোধীরা কটাক্ষ করে এই সিদ্ধান্তকে মমতার দ্বিচারিতা ছাড়া আর কিছুই মনে করছেন না।
পুরভোটের আগে ভোট-রাজনীতি?
সিপিএম, বিজেপি থেকে শুরু করে কংগ্রেস সবাই একযোগে মমতার সিদ্ধান্তে ভোট-রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন। ভোট জিততেই এই চমক বলে মনে করছেন অনেকে। তিনি কখন কী করেন তা কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় বলেও কটাক্ষ করেছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার বলেছেন তলে-তলে গোপন সমঝোতা হয়ে গিয়েছে ফলে ওসব দেখনদারি ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে ১৮ ও ২৫ তারিখ রাজ্যের ৯৩ টি পুরসভার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত কৌশলী রাজনৈতিক পদক্ষেপ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এর মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন সংখ্যালঘু বিরোধী বলে সমালোচিত কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের পাশে থাকার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তেমনই রাজ্যের কৃষক ও কৃষিজীবী মানুষের সঙ্গে যে তিনি এখনও একইরকমভাবে রয়েছেন সেই বার্তাও স্পষ্ট করতে চাইলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
নেত্রীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত কর্মীদের
বস্তুত, কম-বেশি দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও কলকাতা সহ প্রায় সবকটি পুরসভাতেই তৃণমূলের সংখ্যাধিক্য প্রশ্নাতীত। যে কটি বিরোধীদের দখলে রয়েছে সেগুলিতেও এবার ভালো ফল হবে বলে আশা করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তার উপর সংখ্যালঘু ভোটের যেটুকু হাতছাড়া হয়েছে তা যদি ফের ঝুলিতে এসে যায় তাহলে বিরোধীদের উৎখাত করতে সময় লাগবে না। আর তাই নেত্রীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন দলের সব তলার কর্মীরা।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এর তৃণমূল নেতা জানাচ্ছেন, মুকুল রায় পর্বে দলে যে সামান্য ভাঙন ধরেছে তা দিদির এই চালে পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবে। মুকুল রায়ের সঙ্গে সুসম্পর্কের জেরে বেশ কয়েকবার ত্বহা সিদ্দিকি মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন। সারদা পর্বের পর দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় পুরভোটের আগে মুকুল রায় নয়া দল করবেন বলে নানা মহলে আলোচনাও শুরু হয়ে যায়। যদিও তিনি সেপথে যাননি। তাই তৃণমূল নেতার কথায়, মানুষ যখন দেখবে এই রাজ্যে তাঁদের দল ছাড়া এই মুহূর্তে কোনও বিকল্প নেই তখন সব ভোট তাঁদের ঝুলিতেই এসে পড়বে। এক্ষেত্রে দলনেত্রীর বিজেপি তথা কেন্দ্র বিরোধিতা আখেরে ভোটের শতাংশ বাড়াবে বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতারা।