কঙ্কাল কাণ্ডের ‘নায়ক’ পার্থ দে-র অস্বাভাবিক মৃত্যু
রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কাল কাণ্ডের ‘নায়ক’ পার্থ দে-র অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল ওয়াটগঞ্জে। মঙ্গলবার ওয়াটগঞ্জের আবাসন থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
কলকাতা, ২১ ফেব্রুয়ারি : রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কাল কাণ্ডের 'নায়ক' পার্থ দে-র অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটল। মঙ্গলবার ওয়াটগঞ্জের আবাসন থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। দেহের পাশ থেকে একটি পেট্রোলের বোতল উদ্ধার হয়। পাওয়া যায় একটি দেশলাইও। প্রাথমিক তদন্ত মনে করা হচ্ছে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। তবে তার আগেই হার্টফেল করে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অনুমান।
পার্থ দে-র দেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই স্পষ্ট হবে তাঁর মৃত্যুর কারণ। তবে এটা অনেকটাই স্পষ্ট যে, ওয়াটগঞ্জের আবাসনের ওই ঘরে পরিপাটি করে আগুন লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। আগুন লাগানোও হয়েছিল। কোনও কারণে ওই আগুন নিভে যায়। ধোঁয়ার মধ্যেই হার্টফেল করে মৃত্যু হয়।
কঙ্কালকাণ্ডে পার্থ দে-র আচরণ থেকে স্পষ্ট, তিনি একজন মানসিক রোগী ছিলেন। তিনি কীভাবে অন্তরালে চলে গেলেন, একাকী থাকতে শুরু করলেন, তা নিয়ে ভাবেনি প্রশাসন। তাঁকে একা থাকতে দেওয়া মোটেই সমীচীন হয়নি। মনোবিদরা মনে করছেন, মানসিক রোগ থেকেই তিনি কঙ্কাল কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন। এমন একজন মনোরোগীর আরও একটু সমর্থন দরকার ছিল সমাজের। যার জেরে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা যেত।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের জুন মাস ঘটেছিল চাঞ্চল্যকর সেই ঘটনা। রবিনসন স্ট্রিটে মাসের পর মাস নিজের প্রিয় দিদি ও দুই পোষা কুকুরের কঙ্কালের সঙ্গে দিন কাটিয়েছিলেন এই পার্থ দে। সঙ্গী ছিলেন তাঁর বাবা অরবিন্দ দে-ও। পার্থই পুলিশকে জানিয়েছিলেন, ২০১৪ সালের আগস্টে মারা গিয়েছিল তাঁদের পোষা দু'টি কুকুর। দু'টি কুকুরের দেহ বাড়িতেই রেখেছিলেন তিনি ও তাঁর দিদি দেবযানী। বাধা দেননি বাবা অরবিন্দবাবুও।
কিছুদিনের মধ্যেই কুকুরের শোকে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন দেবযানী। চার মাসের মধ্যে ডিসেম্বরেই মৃত্যু হয় পার্থর দিদি দেবযানীর। এরপর ২০১৫-র জুনমাসে অরবিন্দবাবুর অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয় শৌচাগার থেকে। তিনি গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ। সেই দেহ উদ্ধারের পরই সামনে আসে কঙ্কাল কাণ্ড।
পার্থ দে-র বাবা অরবিন্দ দে-র দেহ যেভাবে শৌচাগারের মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল, এদিন পার্থ দে-র দেহও সেই একইভাবে পাওয়া যায়। তদন্তকারীরা প্রাথমিক তদন্তে বলছেন, পার্থ দে আত্মহত্যাই করেছেন। আগুন লাগার আগেই হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে তাঁর মৃত্যু ঘটে। মানসিক অবসাদ থেকেই এই মৃত্যু। বলা যায় পার্থ দে-র বাবার মতোই মৃত্যুকে বেছে নিতে চেয়েছিলেন। তাই এই আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করতে উদ্যত হন তিনি।
২০০৫ সালে পার্থ দে-র মা আরতি দেবীর মৃত্যুর পরই সমাজ জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এই পরিবার। অস্বাভাবিক আচরণের সূত্রপাত সেই থেকেই। অরবিন্দবাবুও বেঙ্গালুরুতে উচ্চপদে কাজ করতেন, পার্থ ও দেবযানীও ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছিলেন। একটা সময়ে পার্থ কর্মসূত্রে আমেরিকায় থাকতেন। দেবযানী ছিলেন সঙ্গীতের শিক্ষিকা। কলকাতার নামী স্কুলে তিনি গান শেখাতেন। ভাইবোন দু'জনেই এরপর চাকরি ছেড়ে দেন।