নোট ইস্যুতে অনাস্থা অস্ত্রে শান দিচ্ছে তৃণমূল, বিজেপির উপর চাপ জারি রাখার চাল
সবাই পিছপা হয়ে গেলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও ঘুঁটি সাজাতে চাইছেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। দলীয় সাসংদদের তেমনই নির্দেশ পাঠিয়েছেন তিনি।
কলকাতা, ১০ ডিসেম্বর : একদিন আগেই নিজেরা অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হয়েছিলেন বিধানসভায়। এবার সেই অস্ত্রেই কেন্দ্রের সরকারকে ঘায়েল করতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভায় যে আভাস দিয়েছিলেন তিনি, এবার তা-ই প্রস্তাব আকারে পেশ করতে আগ্রহী। নোট বাতিল ইস্যুতে বিজেপি সরকারকে চাপে ফেলতে নয়া চাল তৃণমূলের।
নোট বাতিলের প্রতিবাদে সব থেকে সরব হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখনও সেই লড়াই জারি রেখেছেন। সবাই পিছপা হয়ে গেলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও ঘুঁটি সাজাতে চাইছেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। দলীয় সাংসদদের তেমনই নির্দেশ পাঠিয়েছেন তিনি। তাই ১৪ ডিসেম্বর ফের সংসদ চালু হলে তৃণমূল এই নতুন অস্ত্র ছাড়ে কি না, তা-ই এখন দেখার।
নোট বাতিলের একমাস পূর্ণ। সেই বিশেষ দিনে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির সঙ্গে একযোগে কালা-দিবস পালন করেছে তৃণমূল। দিল্লিতে সাংসদরা যখন সম্মিলিত প্রতিবাদে সামিল, তখন বাংলা থেকে মুখ্যমন্ত্রী তোপ দেগেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নৈতিক অধিকার নেই ওই পদে থাকা। রাজ্যের বিরোধী দল কংগ্রেস-সিপিএমও মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের নৈতিক সমর্থন করেছিল।
দিল্লির যন্তরমন্তর থেকে যে ঝড় উঠেছিল, সেই ঝড় এখনই থমকে যাক চান না তৃণমূল সুপ্রিমো। সেই কারণেই সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব আনার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন ইতিমধ্যে। বিরোধীরা এখনও তাঁর পাশেই আছেন। প্রতিনিয়ত টুইটে বা বক্তব্য তিনি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সহমত পোষণ করে চলেছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নোট বাতিল একটা বড় ইস্যু। সেই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা যেতেই পারে। রাজনৈতিক শিষ্টাচার দেখিয়ে আমরা এতদিন বিরত ছিলাম। কিন্তু বিজেপি তথা এনডিএ সরকার কোনও কিছুই সুরাহা করে উঠতে পারেনি এতদিনে। তাই আর একটা ধাক্কা দেওয়াই যায় কেন্দ্রের শাসক শিবিরকে। কংগ্রেস আমাদের সঙ্গে আছে। অন্যান্য বিরোধী দলগুলিকেও তৃণমূল এই ইস্যুতে পাশে পাবে বলে মনে করছে।
বিধানসভায় প্রস্তাব পাস করানোর পর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। সেই চিঠিতে পরিষ্কার ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছিল, নোট বাতিলের পর একটা মাস কেটে গেলেও নতুন নোটের পর্যাপ্ত জোগান নেই। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত পুরনো নোট অবিলম্বে চালু করা। সাধারণ মানুষের নিত্য হয়রানির কথা রাজ্যের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
যদিও এই ইস্যুতে রাজ্য বিধানসভায় কংগ্রেস ও বামেরা পূর্ণ সমর্থন জানায়নি। তাদের দাবি ছিল, নোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার নয়, অবিলম্বে নতুন নোটের জোগান পর্যাপ্ত করুক কেন্দ্র। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদি সরকার তার সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও সরে আসেনি। নতুন নোটের জোগানও পর্যাপ্ত করতে পারেনি। বরং আগের থেকে আরও খারাপ হয়েছে পরিস্থিতি। গ্রামের দিকে এটিএম ও ব্যাঙ্কগুলির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। মানুষ টাকা তুলতে পারছেন না।প্রতিদিন প্রধানমন্ত্রী শুধু ক্যাশলেস সোসাইটির গল্প শুনিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সেই পরিকাঠামো যে এখনও দেশে নেই, সেই ধ্রুব সত্যটুকু মানছেন না তিনি।
তাই বিরোধীরা এখনও এককাট্টা মোদি বিরোধিতায়। মোদি সরকারকে অনাস্থার মুখে ফেলতে তৃণমূল তথা কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের হাতে সময় মাত্র তিনদিন। আগামী তিনদিন ছুটি, তারপর ১৪ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। এরমধ্যেই যা করার করতে হবে তৃণমূলকে।