কারাগারের জীবন নিয়ে ‘বেস্ট-সেলার’ লিখছেন সুদীপ, বইমেলায় মমতার হাতে আত্মপ্রকাশ
১৩৬ দিন জেল খাটার পর অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে মুক্তি মিলেছে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এবার কারাগারের অকথিত কাহিনি লিখছেন তৃণমূল সাংসদ।
জেলমুক্তির পর এবার হাতে কলম তুলে নিলেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ভুবনেশ্বরের জেলের 'বঞ্চনার ইতিহাস' তিনি লিখছেন তাঁর 'প্রিজন-ডায়েরি'তে। বই আকারে সেই জেলবন্দির ডায়েরি আত্মপ্রকাশ করবে এবার বইমেলায়। পরিকল্পনা সারা, স্রেফ বাস্তবায়নের অপেক্ষা।
১৩৬ দিন জেল খাটার পর অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে মুক্তি মিলেছে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। একই অপরাধে এখনও জেলবন্দি আর এক তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল। কিন্তু সুদীপবাবু বহাল তবিয়তে বাইরে। ফের দলীয় সমাবেশে তাঁকে দেখা যাচ্ছে। ধীরে ধীরে ফিরছেন রাজনীতির আঙিনায়। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে বক্তব্য রাখতে যেমন দেখা গিয়েছে, তেমনই লোকসভাতেও বাদল অধিবেশনে নিয়মিত দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
জেলমুক্তির পর প্রথম সংসদে প্রবেশের দিনেই আবার মুখোমুখি দেখা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছিলেন, 'আপনাকে বেশ ভালো লাগেছে।' উত্তরে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, 'হ্যাঁ, আপনি তো ভালোমতোই জানবেন। আপনিই তো জেল পাঠিয়েছিলেন আমায়।' এই কথোপকোথনের সুর যে সুদীপের ডায়েরিতে ধ্বনিত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, তাঁর গ্রেফতারির পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সুদীপবাবুর গ্রেফতারির পর অভিযোগ তুলেছিলেন, নোটবন্দি ইস্যুতে সংসদে সরব হয়েছিলেন বলেই সুদীপদাকে জেলে ঢোকানো হয়েছে। সেই ব্যাখ্যাও থাকবে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'বঞ্চনার ডায়েরি'তে। আর সবথেকে রোমাঞ্চকর যে অধ্যায়, তা হল- জেলে তিনি কাটিয়েছেন স্ত্রীকে ৩০০ খণ্ড করে কাটা এক ডাক্তার-খুনির সঙ্গে। সেই অভিজ্ঞতাও তিনি বর্ণনা করবেন তাঁর লেখণীতে।
রোজভ্যালি কেলেঙ্কারিতে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার হন ৩ জানুয়ারি। তারপর থেকেই তাঁর স্থান হয় ভুবনেশ্বর জেলে। এরপর ১৯ মে তাঁকে জামিনে মুক্তি দেয় ওড়িশা হাইকোর্ট। অর্থাৎ চারমাস ১৬ দিনে তাঁকে কাটাতে হয় জেলবন্দি অবস্থায়। এর অনেকটা সময়ই তাঁর কেটেছে হাসপাতালে। তবু জেলে থাকাকালীন তিনি কাছ থেকে দেখেছেন জেলের অপরাধীদের, দেখেছেন ওড়িশা জেলের পরিকাঠামো, কী অবস্থায় কাটছে জেলবন্দিদের। খাওয়া-থাকার ব্যবস্থা, বন্দিদের সঙ্গে ব্যবহার, এমন অনেক কিছুরই ভুক্তভোগী হয়েছেন তিনিও।
তৃণমূল কংগ্রেস মনে করছে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বই এবার বইমেলায় 'বেস্ট সেলার' হতে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই সুদীপের বঞ্চনার ইতিহাস আত্মপ্রকাশ করবে। সুদীপবাবু তাঁর প্রিজন-ডায়েরিতে লিখছেন, তিনি প্রতিদিন জেলে বসে কী করতেন। তাঁকে কতবার জেরা করা হয়েছি, আদৌ তাঁকে জেরা করে হয়েছিল কি না, প্রতিদিন সকালে জেলের গেট যখন খুলত, তখন তিনি নিয়মিত পায়চারি করতেন। সেই সময় তাপস পালের সঙ্গে তাঁর কী কথা হত, তিনি কী করতেন- সবই থাকবে এই লেখণীতে।
আর সবথেকে চমকপ্রদ অংশ অবশ্যই খুনের আসামী সেনা ডাক্তার সোমনাথ পরিদার সঙ্গে একসঙ্গে জেলে কাটানো। এই সেই ডাক্তার-খুনি, যিনি স্ত্রীকে টর্চলাইট দিয়ে খুন করেছিলেন। এরপর তাঁর দেহ ৩০০ টুকরো করে ২২টি টিফিন বক্সে ভর্তি করে ঢুকিয়ে রেখেছিলেন দু-টি সিন্দুকে।
উল্লেখ্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারিতে দেশের রাজনীতিতে ঝড় উঠেছিল। শুধু রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেসই নয়, দিল্লির রাজনীতিতে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা একযোগে সরব হয়েছিল শাসক বিজেপি-র বিরুদ্ধে। কলকাতা, দিল্লি, ভুবনেশ্বর একযোগে বিক্ষোভ চলেছে। বারবার আঙুল তোলা হয়েছে বিজেপির দিকে। বিজেপিই তাঁকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জেলে পুরেছে বলে অভিযোগ করেছিল তৃণমূল থেকে শুরু করে কংগ্রেস-সহ দলই।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতি করছেন ইন্দিরা গান্ধীর আমল থেকে। তিনি তখন যুব কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। মমতার দলের বরিষ্ঠ এই নেতা জানিয়েছেন, এই বইটি আসলে তাঁর বয়ান। তিনি যা বলতে চান, তা-ই লেখা থাকবে এই 'জেলবন্দির ডায়েরি'তে।