সিঙ্গুর ইস্যুর টাইমলাইন একনজরে
১০ বছর পর রায় বেরল সিঙ্গুর জমি অধিগ্রহণ মামলা নিয়ে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল, যেভাবে ২০০৬ সালে সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল তা অবৈধ ও অসাংবিধানিক। এবং একইসঙ্গে আগামী ১০ সপ্তাহের মধ্যে কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দিতেও নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
সিঙ্গুরের রায়ের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বললেন
সিঙ্গুর নিয়ে ঐতিহাসিক রায় সুপ্রিম কোর্টের, আবেগে ভাসল টুইটার
এদিনের রায়ের পরে গোটা সিঙ্গুর জুড়ে খুশির হাওয়া। সারা রাজ্যে উৎসব শুরু করেছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। আবেগ-উচ্ছ্বাসে ভেসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই মামলার রায়কে ঐতিহাসিক বলে ব্যাখ্যা করেছেন। সব কৃষিজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষকে এই রায় উৎসর্গ করেছেন তিনি। তিনিই এই আন্দোলনের মূল স্থপতি।
একনজরে দেখে নিন এই আন্দোলনের ১০ বছরের টাইমলাইন
১৮ মে ২০০৬ : হুগলির সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা করবে বলে ঘোষণা করল টাটা মোটরস।
১৮ জুলাই, ২০০৬ : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করলেনয
২১ জুলাই, ২০০৬ : সিঙ্গুরের বহুফসলি কৃষিজমিতে ছোট গাড়ির কারখানা করার জন্য নির্মাণকাজ শুরু করে টাটা মোটরস।
৩ ডিসেম্বর, ২০০৬ : মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় সিঙ্গুরের অনুচ্ছুক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য 'কৃষিজমি বাঁচাও কমিটি' তৈরি করে ধর্মতলায় মঞ্চ বেঁধে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করলেন।
২৮ ডিসেম্বর, ২০০৬ : রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে ও মাননীয় রাজ্যপালের কথায় অনশন ভঙ্গ করে হাসপাতালে ভর্তি হলেন অসুস্থ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
৪ জানুয়ারি, ২০০৭ : ন্য়ানো কারখানায় কাজ করার জন্য কর্মচারীদের নিয়োগ করল টাটা মোটরস।
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ : সিঙ্গুরে তৃণমূলের মিচিলকে কেন্দ্র করে তুমুল উত্তেজনা। সিঙ্গুরে অশান্তির জন্য দায়ী বলে রতন টাটা সরাসরি আক্রমণ করলেন বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেসকে।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ : সিঙ্গুর মামলা গেল কলকাতা হাইকোর্টে। এই সময়েই সিঙ্গুরবাসী হামলা চালাল পাঁচিল ঘেরা টাটা মোটরসের জমিতে। একইসঙ্গে সিঙ্গুরে আত্মহত্যা করলেন কৃষক হারাধন বাগ।
২৪ মে, ২০০৭ : তৎকালীন বাম সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে টাটার কারখানা নিয়ে বৈঠক ভেস্তে গেল। দু'পক্ষের কেউ নিজেদের রাস্তা থেকে সরেননি।
১৯ অগাস্ট ২০০৮ : ৪০০ একর জমি ফিরিয়ে বাকী ৬০০ একরে শিল্প করতে পারে টাটা। ফের জানালেন মমতা। ফের মমতা-বাম সরকার বৈঠক ভেস্তে গেল।
৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ : তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী টাটা বিতর্কে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেন। তবে তা ভেস্তে যায়।
৩ অক্টোবর, ২০০৮ : সিঙ্গুর ছাড়ছে টাটা গোষ্ঠী। সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন রতন টাটা।
৭ অক্টোবর, ২০০৮ : সিঙ্গুরের ন্যানো কারখানা তৈরি হবে গুজরাতের সানন্দে, ঘোষণা টাটার।
২০ মে, ২০১১ : বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসাব শপথ নিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফিরেই তিনি জানালেন সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের ৪০০ একর জমি ফেরত দেওয়া হবে।
৯ জুন, ২০১১ : সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অর্ডিন্যান্স জারির ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৪ জুন, ২০১১ : সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন ও উন্নয়ন বিল ২০১১ পাশ হল বাংলা বিধানসভায়।
২২ জুন, ২০১১ : এই বিলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করল টাটা কর্তৃপক্ষ।
২৯ জুন, ২০১১ : সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যকে নির্দেশ দিল, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ না পেলে জমি কৃষকদের মধ্যে বিলি না করতে।
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১১ : সিঙ্গুর আইনকে বৈধ বলে জানাল কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ জানাল টাটা মোটরস।
২২ জুন, ২০১২ : 'সিঙ্গুর আইন' চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে গেল টাটা মোটর্স। সরকারি নির্দেশের উপরে স্থগিতাদেশ চাইল তারা।
৬ অগাস্ট, ২০১২ : কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্য়ালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করল টাটা মোটরস কর্তৃপক্ষ।
৫ মে, ২০১৬ : সিঙ্গুরে জমিঅধিগ্রহণের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করা হয়েছিল বলে পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের।
৩১ অগাস্ট, ২০১৬ : সিঙ্গুর জমি অধিগ্রহণকে অবৈধ বলে ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ১০ সপ্তাহের মধ্যে কৃষকদের জমি ফেরতের নির্দেশও দিল সর্বোচ্চ আদালত।